উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিমান দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের চিকিৎসায় ও নেগেটিভ রক্তের সংকটে দিশেহারা হাসপাতালগুলো। সাধারণ মানুষ রক্ত দিতে এগিয়ে এলেও এই বিরল গ্রুপটি না পাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে।
ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়িতে ভয়াবহ এক বিমান দুর্ঘটনার পর আহতদের চিকিৎসায় রক্তের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ‘ও নেগেটিভ’ রক্তের অভাবে চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকরা উদ্বিগ্ন।
সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবনের গেটের সামনে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার পরপরই উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়, আকাশে উঁচু ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায় অনেক দূর থেকে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি ছিল বিমান বাহিনীর ‘এফ-৭ বিজেআই’ প্রশিক্ষণ বিমান, যা দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হয় বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
দুর্ঘটনার পর আহতদের মধ্যে অনেককে আশপাশের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে। উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। আহতদের অনেকেই দগ্ধ অবস্থায় রয়েছেন, যাদের চিকিৎসায় প্রয়োজন বিশেষ রক্ত।
উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের সামনে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী তরুণরা রক্ত সংগ্রহের উদ্যোগ নেন। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ‘ও নেগেটিভ’ রক্তের অনুপস্থিতি। স্বেচ্ছাসেবক সিফাত বলেন, “অন্যান্য রক্ত গ্রুপ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু ও নেগেটিভ কিছুতেই মিলছে না। অথচ কয়েকজনের জীবন রক্ষা করতে হলে এটি জরুরি।
এই ঘটনায় এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার লিমা খানম। তিনি আরও বলেন, “বিমান বাহিনীর সদস্যরা আহতদের দ্রুত সরিয়ে নিচ্ছেন। এখনো নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল জানান, উড়োজাহাজটি প্রতিষ্ঠানটির একটি অ্যাকাডেমিক ভবনের গেটের সামনে আছড়ে পড়ে। সেই সময়ে ক্লাস চলছিল এবং ঘটনার পরপরই একে একে আহত শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের বের করে আনা হয়।
দুর্ঘটনাস্থলে সেনা ও বেসামরিক বাহিনীর তৎপরতা চলছিল সারাক্ষণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যোগ দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) দুইটি প্লাটুন। উদ্ধার তৎপরতার পাশাপাশি গোটা এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর রক্তদাতাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকরা। বিশেষ করে ও নেগেটিভ রক্তদাতাদের দ্রুত এগিয়ে আসার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে।
ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে এখন পর্যন্ত বৈমানিকের কোনো তথ্য জানানো হয়নি। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা সংকটজনক বলে জানা গেছে।
এই ঘটনাটি পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। রক্তের জন্য মানুষের এমন আকুতি এবং জীবন রক্ষার এই প্রচেষ্টা আমাদের মানবিক দায়বদ্ধতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।