রাজনীতির আড়ালে এক ভয়াবহ বাস্তবতা উন্মোচিত হলো—জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অন্যতম মুখ সরোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য নীলা ইসরাফিল। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি এ অভিযোগপত্রটি প্রকাশ করেন এবং এনসিপি কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির কাছেও তা জমা দিয়েছেন।
নীলার এই অভিযোগ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ এতে উঠে এসেছে একজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে নারীকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ—যা আগেও রাজনীতিতে একাধিকবার দেখা গেছে, কিন্তু প্রকাশ্যে আসেনি।
অভিযোগে নীলা জানান, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে তিনি চরম দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সেই সময়ে এনসিপির তৎকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে তাকে মানসিক সমর্থন দেন। কিন্তু সময়ের সাথে সেই সম্পর্ক আর রাজনৈতিক রেশ বজায় থাকেনি—তা রূপ নেয় ব্যক্তিগত অগ্রহণযোগ্য ও অনৈতিক আচরণে।
নীলার ভাষায়, "তিনি প্রায়ই রাতের বেলায় ফোন করতেন। বলতেন, ‘রাজনীতি নয়, তোমার কণ্ঠে স্লোগান ভালো লাগে’, ‘তোমার ঠোঁট সুন্দর’, ‘একটা সুন্দর ছবি পাঠাও।’ আমি হতচকিত হয়ে যেতাম। বারবার পেশাদার সীমা বজায় রাখার কথা বলেছি, কিন্তু তিনি তা শোনেননি।"
তিনি অভিযোগ করেন, সরোয়ার তুষার ছবির জন্য চাপ দিতেন, ভিডিও কলে কথা বলার জন্য জোর করতেন। এক পর্যায়ে এমনকি বলে বসেন, "তোমার বিষয়ে ডিবি অফিসার যদি কিছু জানতে চায়, আমি বলে দিয়েছি তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড!" — এমন মন্তব্য একজন রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং সামাজিকভাবে মর্যাদাহানিকর বলেই মনে করেন নীলা।
নীলা এই পোস্টে সরাসরি বলেন, "আমার রাজনীতি ভালোবাসা থেকে করি, কোনো নেতার ব্যক্তিগত ‘প্রশংসার পাত্র’ হতে নয়। একজন নারী কর্মীর সম্মান যেমন থাকা উচিত, আমি তার লড়াই করছি।"
তিনি দাবি করেন, নারীকর্মীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সেইসাথে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন, নারীবান্ধব তদন্ত কমিটি গঠন করার আহ্বান জানান।
এখন পর্যন্ত সরোয়ার তুষার কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেননি। এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকেও এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। তবে দলীয় ভেতরে বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে এবং তদন্ত কমিটির ভূমিকা নিয়ে সদস্যরা অপেক্ষায় রয়েছেন।
নীলার এই পদক্ষেপ কেবল একজন নারীর আত্মসম্মান রক্ষার লড়াই নয়, এটি সমগ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচন। রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে অভ্যন্তরীণ নৈতিকতা বজায় রাখবে এবং নারীদের প্রতি আচরণে কতটা সচেতন হবে—তা এখন প্রশ্নের মুখে।
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ:
-
এনসিপি নেতা তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনলেন কেন্দ্রীয় সদস্য নীলা ইসরাফিল
-
অভিযোগে রয়েছে রাতভর ফোন, অশালীন মন্তব্য ও ভিডিও কলের চাপ
-
তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা, দাবি নারীবান্ধব ব্যবস্থা গঠনের
-
সরোয়ার তুষার বা এনসিপি পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া নেই