ইমামোগলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং গ্রেপ্তারের কারণ
গত ১৮ মার্চ ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয় একরেম ইমামোগলুর স্নাতক ডিগ্রি বাতিল ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তার ডিগ্রিতে ‘অনিয়ম’ পাওয়া গেছে। তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে হলে উচ্চতর ডিগ্রি থাকতে হয়। ফলে, ডিগ্রি বাতিল হওয়ায় ইমামোগলুর ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
এরপর ১৯ মার্চ তাকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদে সহযোগিতা এবং একটি অপরাধমূলক সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার এই গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই তুরস্কজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়।
তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভ, সরকারের কঠোর অবস্থান
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর থেকে তুরস্কের প্রধান শহরগুলোতে বিক্ষোভ চলছে। ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা, ইজমিরসহ বড় শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা তো রয়েছেনই, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকেই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়ারলিকায়া জানান, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করা হচ্ছে।
কে এই একরেম ইমামোগলু?
একরেম ইমামোগলু ১৯৭০ সালের ৪ জুন তুরস্কের ত্রাবজোন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ২০০৮ সালে তিনি সিএইচপিতে যোগ দেন এবং ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইস্তাম্বুলের বেলিকদুজু ডিস্ট্রিক্টের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচনে এরদোয়ানের একে পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে ইস্তাম্বুলের মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।
এরদোয়ানের প্রতিক্রিয়া
রাজধানী আঙ্কারায় এক ইফতার অনুষ্ঠানে এরদোয়ান বলেছেন, "দেশ বর্তমানে একটি নাজুক সময় পার করছে। আমি সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাই। যারা দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, তাদের কোথাও জায়গা হবে না। বিক্ষোভকারীরা করুণ পরিণতির পথ বেছে নিয়েছেন।"
এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইমামোগলুকে দমন করতে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। তবে আন্দোলনের বর্তমান গতিপ্রকৃতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, সরকার যতই কঠোর হোক না কেন, জনগণের ক্ষোভ কমছে না। বরং, ইমামোগলুর জনপ্রিয়তা আরও বাড়ছে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ
তুরস্কে বর্তমানে যা চলছে, তা শুধু একটি রাজনৈতিক সংকট নয়, বরং এটি গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ইমামোগলুর গ্রেপ্তার এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করে এরদোয়ান হয়তো সাময়িকভাবে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে দমন করতে চাইছেন, তবে এই গ্রেপ্তারই ইমামোগলুকে আরও জনপ্রিয় করে তুলছে। আগামী দিনে তুরস্কের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেবে, তা নির্ভর করবে জনগণের প্রতিক্রিয়া এবং আন্দোলনের ভবিষ্যৎ গতিপ্রবাহের ওপর।