close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

তুমি কি মুসলিম জানতে চাওয়ার পরই নি উ ই য় র্কে নারীর ওপর হা ম লা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নিউইয়র্কের সাবওয়েতে ‘তুমি কি মুসলিম’ জিজ্ঞাসার পরই এক নারীর ওপর নৃশংস হামলা চালায় নাভেদ দুরানি। মাথায় চোট, নাক ভাঙা, হামলাকারী এখন পুলিশের হেফাজতে।..

নিউইয়র্কের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কুইন্সের একটি ব্যস্ত সাবওয়ে স্টেশনে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ও বিভীষিকাময় ঘটনা। বুধবার (১৮ জুন) ভোররাতে একটি চলন্ত ট্রেনে ৫৫ বছর বয়সী এক নারীর ওপর নৃশংস হামলা চালান এক ব্যক্তি, যিনি তার ধর্মপরিচয় জানার পরই চরম সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম WABC জানিয়েছে, ঘটনার শুরু সেই সময়, যখন ওই নারী প্রতিদিনের মতোই সাবওয়ে ট্রেনে উঠছিলেন। হঠাৎই ৩৪ বছর বয়সী নাভেদ দুরানি নামের এক ব্যক্তি তার খুব কাছে এসে প্রশ্ন করেন,
"তুমি কি মুসলিম?"

এই প্রশ্নের জবাবে নারীটি "হ্যাঁ" বলতেই যেন দুরানির ভেতরে রক্তপিপাসু দানব জেগে ওঠে। এক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা না করে তিনি লাথি-ঘুষিতে ওই নারীকে মারতে শুরু করেন। তার মাথা, মুখ, ঘাড়সহ শরীরজুড়ে একের পর এক আঘাত হানেন দুরানি। ট্রেনের দরজা বন্ধ হওয়ার পর হামলা আরও তীব্র রূপ নেয় এবং পুরো সময়টি জুড়ে চলে এ নির্যাতন।

ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে বেঁচে ফেরা নারী জানান,আমি বারবার বলছিলাম, থামুন থামুন। কিন্তু তিনি থামলেন না। বুঝতেই পারছিলাম না কি হচ্ছে আমার সঙ্গে। মাথা ঝিমঝিম করছিল, রক্ত ঝরছিল নাকে-মুখে।

পরবর্তী স্টেশনে ট্রেন থামতেই দুরানি পালিয়ে যান। কিন্তু ইতোমধ্যে ওই নারী মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হন — তার নাক ভেঙে যায়, মাথায় গুরুতর চোট লাগে এবং পুরো শরীরজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন।

নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র জানান, দুরানি মুখ ঢেকে রেখেছিলেন এবং হামলার সময় ছিলেন চরম উগ্র আচরণে। তবে দুই নারী যাত্রী ও এক সাবওয়ে কন্ডাক্টরের সাহসী সহযোগিতায় পুলিশ দ্রুত দুরানিকে শনাক্ত করে এবং গ্রেপ্তার করে ‘ঘৃণা ছড়ানো’ এবং ‘শারীরিক আক্রমণের’ অভিযোগে

হামলার শিকার নারী বলেন,এই ভয়াবহ ঘটনা আমাকে সারাক্ষণ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আগে কখনও এমন কিছু দেখিনি। তার মুখ আমি ভুলতে পারছি না।

এই ঘটনার পর তার চিকিৎসা, মানসিক সাপোর্ট, বাসাভাড়া ও অন্যান্য জরুরি খরচ মেটাতে ‘GoFundMe’-তে একটি তহবিল সংগ্রহ পেজ খোলা হয়েছে। যার উদ্যোক্তা নিজেকে ওই নারীর সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন,মা শুধু আমাদের দুইজনের খরচ চালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি একদিকে শারীরিকভাবে অচল, অন্যদিকে চিকিৎসার খরচ, ওষুধ, পরীক্ষার খরচ সবই হিমশিম খাওয়াচ্ছে। মাথার আঘাত এখনো কমেনি। তিনি কাজে ফিরতে পারছেন না।

এই হামলা আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে— যুক্তরাষ্ট্রের মতো বহুজাতিক, বহু-সংস্কৃতির সমাজেও এখন ইসলামবিদ্বেষঘৃণার রাজনীতি ভয়ানক আকার ধারণ করছে। সাধারণ মানুষ নিজের ধর্ম পরিচয়ে হ্যাঁ বললেই যদি শারীরিক হামলার শিকার হন, তবে সমাজের নিরাপত্তা ও সহনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

নিউইয়র্ক পুলিশের ভাষ্যমতে, এটি শুধু একটি আক্রমণ নয়, এটি একপ্রকার ঘৃণা–প্রসূত অপরাধ, যার লক্ষ্য ছিল একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় পরিচয়। তারা আরও জানিয়েছেন, দোষীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে তারা কাজ করছেন।

এই ঘটনা প্রমাণ করে, আজকের পৃথিবীতে এখনো নিরাপত্তার জন্য শুধু নিজের ধর্ম পরিচয়ই কখনো কখনো 'অপরাধে' পরিণত হতে পারে। এই ঘটনার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে, এমন হামলা যে আরেকজনের জীবনে কখন ঘটবে, বলা যায় না।

Ingen kommentarer fundet