সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের তরুণ ভোটারদের বড় অংশ বিএনপিকে সমর্থন করছে। তবে রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নিতে আগ্রহী নয় ৮৩ শতাংশ তরুণ, কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সহিংসতা ও নেতাদের নৈতিক সংকট।
দেশের তরুণ ভোটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় দল এখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)’ ও ‘অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ’-এর যৌথভাবে পরিচালিত একটি জরিপে উঠে এসেছে এমন চিত্র। ‘ইউথ ইন ট্রানজিশন’ শীর্ষক এই জরিপে দেশের আটটি বিভাগের শহর ও গ্রাম এলাকার ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সি প্রায় দুই হাজার তরুণ-তরুণীর মতামত নেওয়া হয়।
গতকাল সোমবার (৮ জুলাই) প্রকাশিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৩৮.৭৬ শতাংশ তরুণ ভোটার বিএনপিকে তাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জামায়াতে ইসলামি, যাদের পক্ষে ভোট দিতে চান ২১.৪৫ শতাংশ। সদ্য গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পেয়েছে ১৫.৮৪ শতাংশ তরুণের সমর্থন।
এই জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের ৭৬.৭৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা ভোট দিতে চান, তবে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান না তরুণদের বিশাল অংশ।
রাজনীতিতে আগ্রহ নেই তরুণদের, কারণ সহিংসতা ও নৈতিকতার সংকট
জরিপ অনুযায়ী, ৮২.৭ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, তারা রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান না। তাদের মতে, রাজনীতিতে প্রবেশ মানেই সহিংসতা, অস্থিরতা ও নৈতিকতা সংকটে পরা। রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থার ঘাটতি এবং নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা।
জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের মতে, দেশে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং কর্মসংস্থানের অভাব রাজনৈতিক ব্যর্থতার বড় প্রমাণ। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলো এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ।
জরিপটি পরিচালনা সম্পর্কে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান জানান, ‘‘এই জরিপ কেবল তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে। এটি দেশের পুরো জনগোষ্ঠীর মতামত নয়। সুতরাং, ফলাফল ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাধারণীকরণ করা উচিত নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা তরুণদের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার উন্নয়ন ও পরিবর্তন বুঝতে চেয়েছি।
তরুণদের সংকেত: নতুন নেতৃত্ব ও সিস্টেম চাই
এই জরিপে উঠে আসা তথ্যগুলো তরুণদের একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় — তারা পরিবর্তন চান। কিন্তু সেই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব, সহিংসতামুক্ত রাজনীতি ও নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
তরুণদের অনাগ্রহের মাঝেও ভোট দেওয়ার আগ্রহ দেখায়, তারা এই ব্যবস্থাকে বাতিল করতে নয়, বরং বদলাতে চায়। এই পরিবর্তনের সুযোগ এখন রাজনীতিকদের হাতে—তারা যদি তরুণদের কথা শুনে কার্যকর নীতি গ্রহণ করেন।