ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে ফের একবার বিশ্ববাসীর নজর তেহরানের দিকে। ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ-বাকের কালিবাফ জানিয়েছেন, ইরান এখন আর শুধু রণপ্রস্তুত নয়, বরং আক্রমণের মুখে পাল্টা জবাব দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত। “ইরানের হাত ট্রিগারেই আছে”— এই একটি বাক্যে যেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিলেন তিনি।
সম্প্রতি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর উপর ইরানের সশস্ত্র বাহিনী যে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে, তা ছিল ইতিহাসের অন্যতম বড় পাল্টা প্রতিক্রিয়া। একটানা ১২ দিন ধরে চলা আগ্রাসনের জবাবে ইরান চালিয়েছে ভয়ঙ্কর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা— ২২টি টার্গেটে আঘাত হেনেছে উন্নত ব্যালিস্টিক মিসাইল ও সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে। এই ঘটনায় ইসরায়েলি সরকার একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এক কথায়, মধ্যপ্রাচ্যের বাতাসে যুদ্ধের গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।
কালিবাফ বলেন, “শত্রুরা আমাদের জনগণের ইস্পাতদৃঢ় মনোবলের কাছে পরাজিত। ইরান জাতি আধুনিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। আমাদের সাহসিকতা, ঐক্য ও দেশপ্রেম এখন বিশ্বকে পথ দেখাবে।” তিনি দাবি করেন, এবারকার প্রতিক্রিয়া শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক স্তরেও ইসরায়েলের পরাজয় নিশ্চিত করেছে।
তিনি আরও জানান, ইরানের জনগণকে ধন্যবাদ জানাতেই তিনি এই বিবৃতি দিয়েছেন। কারণ, তারা শুধু সম্মুখযুদ্ধে নয় বরং মনোবলেও শত্রুদের পরাজিত করেছে। “বিশ্ব এখন এক কণ্ঠে ইরানিদের প্রশংসা করছে। আমাদের ঐক্য এবং দেশপ্রেমের কথা সবাই স্বীকার করতে বাধ্য,” — বলেন তিনি।
এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা তুঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও জাতিসংঘ— সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে। কিন্তু ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে— তারা কোনও ধরনের হুমকিতে পিছিয়ে যাবে না।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই শক্ত অবস্থান এবং স্পিকারের সরাসরি “ট্রিগারে হাত”- মন্তব্য শুধু ইসরায়েল নয়, গোটা পশ্চিমাদের জন্য কড়া বার্তা। বিশ্বরাজনীতিতে নতুন করে ইরান তার শক্তিমত্তা দেখাতে শুরু করেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলোতে ইতোমধ্যেই প্রকাশ পাচ্ছে আতঙ্কের চিত্র। বলা হচ্ছে, এই হামলার ফলে ইসরায়েলের বেশ কিছু সামরিক ইনস্টলেশন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি ইসরায়েল নিজেই এখন আক্রমণের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনায় রেখে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক চুলচেরা বিশ্লেষণে যাচ্ছে।
এই মুহূর্তে স্পষ্ট— যুদ্ধ যদি হয়, তাহলে ইরান শুধু প্রস্তুত নয়, আঘাত হানতেও এক পা পিছাবে না। পার্লামেন্ট স্পিকারের এই ঘোষণা নতুন করে প্রমাণ করল— মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ রাজনীতি আর আগের মতো নেই। ‘ট্রিগারে হাত’ মানে শুধু হুঁশিয়ারি নয়, বরং এক শক্তিশালী সত্য— যা বদলে দিতে পারে গোটা অঞ্চলের ইতিহাস।