রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নোবেল কমিটির মর্যাদা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তিনি দাবি করেন, ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক সংঘাত ও সংকট নিরসনে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, অথচ তাকে উপেক্ষা করা হয়েছে রাজনৈতিক পক্ষপাতের কারণে।
তাজিকিস্তানের রাজধানী দূশানবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নোবেল কমিটি এমন ব্যক্তিদের পুরস্কার দিয়েছে যারা বাস্তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কিছুই করেননি। এর ফলে পুরস্কারের সম্মান ও প্রভাব উভয়ই কমে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “তবুও ট্রাম্প যে কাজগুলো করছেন তা নিঃসন্দেহে জটিল আন্তর্জাতিক সংকট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখছে।”
পুতিন বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “যদি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০-পয়েন্ট পরিকল্পনা গাজা উপত্যকায় কার্যকর হয়, তবে তা ইতিহাসে একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা করবে।” তিনি ট্রাম্পের পদক্ষেপকে “বাস্তবসম্মত ও সাহসী প্রচেষ্টা” বলে অভিহিত করেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গেও পুতিন ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প আন্তরিকভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছেন। এই যুদ্ধ ইতিমধ্যেই তিন বছর ছয় মাস অতিক্রম করেছে, কিন্তু তিনি এখনও সমাধানের পথ খুঁজছেন।” পুতিনের মতে, এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি দৃষ্টান্ত।
এর আগে নরওয়ের নোবেল কমিটি শুক্রবার ঘোষণা করে, ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাচ্ছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া করোনা মাচাদো। তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে “ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় নিরলস প্রচেষ্টার জন্য।” তবে এই সিদ্ধান্তে ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, কারণ তারা মনে করছেন—ট্রাম্পই ছিলেন এই পুরস্কারের সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প পূর্বেও নিজেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু এবারও তাকে উপেক্ষা করায় তিনি সরাসরি মন্তব্য না করলেও সামাজিক মাধ্যমে পুতিনের প্রশংসার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নিজের Truth Social অ্যাকাউন্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ধন্যবাদ!”—এর সঙ্গে তিনি পুতিনের সেই বক্তব্যের ভিডিওও শেয়ার করেছেন।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের এই মন্তব্য শুধু নোবেল কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়েই নয়, বরং পশ্চিমা রাজনৈতিক প্রভাব ও পক্ষপাতের বিরুদ্ধেও একধরনের কূটনৈতিক বার্তা। তাদের মতে, পুতিনের মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, নোবেল পুরস্কার এখন আর শুধু মানবিকতা বা শান্তির প্রতীক নয়—বরং এটি রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ারেও পরিণত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ট্রাম্প সমর্থকরা বলছেন, পুতিনের বক্তব্য “সত্যকে প্রকাশ করেছে”, আর বিরোধীরা বলছেন, “এটি রাজনৈতিক কৌশল ছাড়া কিছুই নয়।” তবুও একটি বিষয় পরিষ্কার—ট্রাম্পকে নোবেল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরে নতুন করে বিতর্কের আগুন জ্বলেছে বিশ্বজুড়ে।