যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্ট, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে ফেডারেল বিচারকদের ক্ষমতা সীমিত করে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেছে। এই রায়ের মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসী এবং অস্থায়ী ভিসাধারীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধ করার ট্রাম্পের উদ্যোগ কার্যকর হওয়ার পথ খুলে গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই রায়কে ‘বিশাল জয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এটি এমন এক উদ্যোগ যা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রদান বন্ধ করতে চায়, যা অনেক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই রায় দেশের অভিবাসন নীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
গত ২৭ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিবাসন অধিকার গোষ্ঠী এবং ২২টি রাজ্য মামলা করেছিল। ম্যারিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, ও ওয়াশিংটনসহ অন্যান্য রাজ্য এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানায়। প্রথম দিকে মামলার ফলাফলে আদেশটি স্থগিত রাখা হয়েছিল।
কিন্তু মার্কিন বিচার বিভাগ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে, আদালত প্রাথমিক আদেশকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দেয়। সুপ্রিম কোর্টের রক্ষণশীল বিচারকরা ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে বলেন, তারা প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার ব্যাপারে নজর দিয়েছেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি নয়।
এতে বোঝা যায় যে, ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের ওপর আইনি চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। এই রায়ের ফলে প্রশাসন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে দ্রুত নীতি গ্রহণ করতে পারবে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যেগুলোর একটি ছিল জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধের উদ্যোগ। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, এই রায় সংবিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডিও, যিনি জানান, এই রায় বিচারকরা আর ট্রাম্পের নীতিগুলো আটকে রাখতে পারবেন না। তবে, অক্টোবরের পরবর্তী সুপ্রিম কোর্ট সেশনে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রশ্ন বিবেচনা করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো আদালত প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশকে অসাংবিধানিক মনে করে, তবে সেই আদেশ স্থগিত করতে পারবে, তবে সেই স্থগিতাদেশ হবে বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, যা অর্থ প্রেসিডেন্ট কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
আদালতের আদেশ অনুসারে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধের আদেশ কার্যকর হবে রায়ের ত্রিশ দিন পর, কিন্তু এ নিয়ে আরও আইনি চ্যালেঞ্জ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রায় মার্কিন অভিবাসন নীতিতে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে, যেখানে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার ব্যাপারে স্পষ্ট সীমারেখা স্থাপন হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই রায় আদায়ে সরকারের নীতি বাস্তবায়নে এক নতুন শক্তি যোগ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অভিবাসন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলবে।