close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ট্রা ম্পে র ই রা ন আ ক্র ম ণ, নেতা নি য়াহু র অনন্ত যু দ্ধে র মূল্য হবে চড়া..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানে ট্রাম্পের হামলা ও নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতির ফলে ইসরায়েলের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে, গণতন্ত্র সংকুচিত হচ্ছে, আর ধর্মীয় উগ্রবাদে এগোচ্ছে রাষ্ট্র।..

মধ্যপ্রাচ্যে আবারো নতুন এক যুদ্ধ-অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ইসরায়েলের ধর্মীয় আগ্রাসন বিশ্বের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সম্প্রতি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে “অত্যন্ত সফল অভিযান” বলে ঘোষণা করলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি একটি আত্মঘাতী কৌশলের সূচনা।

ইসরায়েলের পূর্ববর্তী সামরিক নীতিতে যেখানে লক্ষ্য ছিল সংক্ষিপ্ত, নিষ্পত্তিমূলক ও কৌশলগতভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযান, সেখানে এখন দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে গেছে। ইসরায়েল বর্তমানে ধর্মীয় উগ্রতা ও ‘ত্রাতাবাদী উপনিবেশবাদের’ পথে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে যুদ্ধের ভাষা হয়ে উঠেছে ধর্মীয়, এবং টিকে থাকার কৌশল হয়ে উঠেছে চিরস্থায়ী সংঘাত।

এই পরিবর্তনের অর্থ হলো—ইসরায়েল আর সামরিক দক্ষতা ও কৌশলে নির্ভর করছে না, বরং ধর্মীয় অনুশাসনকে অস্ত্র বানিয়ে চলেছে। যুদ্ধের যুক্তিতে সৃষ্টিকর্তার উল্লেখ, এবং ইহুদি জাতির ‘ঐশ্বরিক কর্তৃত্ব’ ব্যবহারের চেষ্টা এটিই প্রমাণ করে।

ইরানের ফর্দো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানে হামলা ইসরায়েলকে সাময়িক সফলতা দিলেও, এর পরিণতি নেতানিয়াহুর জন্য হয়ে উঠেছে বিষময়। নিজ দেশের অভ্যন্তরেই তাঁকে এখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিরোধীদের কঠিন প্রশ্নের। নেতানিয়াহুর আগের সামরিক অভিযানগুলো যেসব মধ্যবিত্ত সেক্যুলার শ্রেণির সমর্থন পেয়েছিল, তারাই এখন প্রশ্ন তুলছেন—কেন তাদের মানসম্পন্ন জীবনযাপন ত্যাগ করে অন্তহীন যুদ্ধে যেতে হবে?

আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নাগরিক স্বাধীনতা হ্রাস এবং দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বেঞ্জুরিয়ন বিমানবন্দর থেকে অনেক ফ্লাইট এখন শুধুই পর্যটক ও বিদেশিদের জন্য উন্মুক্ত। সাধারণ ইসরায়েলিরা কার্যত দেশের ভেতরে বন্দি।

এই সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক হিসাবও রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদি বিদেশ ভ্রমণের সামর্থ্য যাদের রয়েছে, সেই মধ্যবিত্ত শ্রেণি মূলত বিরোধী দলের ভোটার। অন্যদিকে, লিকুদ পার্টির ভোটব্যাংক মূলত শ্রমজীবী, নিম্ন-মধ্যবিত্ত, যারা আন্তর্জাতিক ভ্রমণ খুব একটা করে না। কাজেই এই নিষেধাজ্ঞা একরকম ‘রাজনৈতিক নিধননীতি’ হিসেবেই কাজ করছে।

এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির সুযোগে অনেক ধনী ইসরায়েলি তাঁদের অর্থ বিদেশে সরিয়ে নিচ্ছেন। একটি আর্থিক সেবা সংস্থার মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে ইসরায়েলি অর্থ বিদেশে পাঠানোর হার বেড়েছে সাত গুণ, যেখানে মাত্র এক বছরেই প্রায় ৫.৬ বিলিয়ন ডলার বাইরে গেছে।

নেতানিয়াহু বহু বছর ধরে প্রচার করে এসেছেন, একটি শক্তিশালী অর্থনীতি ইসরায়েলের আধুনিক সামরিক শক্তিকে চালিয়ে রাখবে। কিন্তু এই বাস্তবতা এখন মুখ থুবড়ে পড়ছে। তাঁর ডানপন্থী ধর্মীয় জোটসঙ্গীরা যুদ্ধ চায়, কিন্তু তারা অর্থনীতিতে কোনো অবদান রাখে না। এর ফলে অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড যাদের হাতে—সেই সেক্যুলার ও প্রযুক্তিনির্ভর শ্রেণিই এখন রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে চলে যাচ্ছে।

নেতানিয়াহু ও তাঁর উগ্র ধর্মীয় মিত্ররা ইসরায়েলকে দ্রুত নিয়ে যাচ্ছেন এক ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ববাদী রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দিকে, যেখানে রাজনীতি, যুদ্ধ এবং ধর্ম মিলে এক ধরনের বর্ণবাদী আধিপত্য গড়ে তুলছে। এর মধ্যেই দেখা যাচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ও বিদেশি শ্রমিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে—এমনকি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময়ও।

ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে যখন দেখা যাচ্ছে দেশের সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে। জরুরি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে হয়েছে, যা শুধু জরুরি ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখবে। এর মানে, সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ এবং এক অন্তহীন আতঙ্ক।

মানসিক চাপ এখন সীমা ছাড়িয়েছে। কারণ ইরানের হামলার ভয় একেবারে বাস্তব হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ শুধু বাহ্যিক নয়, এখন তা মন ও মগজেও ছড়িয়ে পড়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘সফল’ হামলা এবং নেতানিয়াহুর ‘সাহসী’ যুদ্ধনীতি আসলে ইসরায়েলের জন্য এক আত্মঘাতী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ধর্মীয় উগ্রবাদ, অর্থনৈতিক পতন, নাগরিক অধিকার হ্রাস, গণতন্ত্র সংকোচন এবং আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা—সব মিলিয়ে ইসরায়েল আজ এক ভয়াবহ বিপদের মুখোমুখি।

এই যুদ্ধের মূল মূল্য ইরান নয়, ইসরায়েলই দিচ্ছে—অর্থনীতি, সমাজ ও বিবেকের রক্তপাত দিয়ে।

No comments found


News Card Generator