তিস্তা নদী পুনর্গঠনসহ বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরোপুরি প্রস্তুত চীন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে এখন বাংলাদেশ সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে বেইজিং।
বিশ্ব রাজনীতির পালাবদলে চীনের কূটনৈতিক তৎপরতা এখন বাংলাদেশে আরও সরব। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিক্যাব টকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, তিস্তা নদী পুনর্গঠন ও বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নে চীন সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। এখন শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশের।
রাষ্ট্রদূত বলেন, "আমরা বাংলাদেশ সরকারের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছি। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান আমূল পরিবর্তন হবে। কৃষি, জলসংরক্ষণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।"
ডিক্যাব আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির কঠোর সমালোচনা করে ইয়াও ওয়েন বলেন, "মার্কিন ট্যারিফ নীতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা বাড়বে। উন্নয়নশীল দেশগুলো আরও চাপে পড়বে।"
তিনি বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি, বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি ন্যায়সঙ্গত, ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হওয়া উচিত, যেখানে সব দেশ সমানভাবে অংশ নিতে পারে।"
রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, চীন-বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিং। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে—অঞ্চলজুড়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং স্ব-স্ব দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা।
তবে এই অংশীদারিত্বকে কোনো রাজনৈতিক বা প্রতিরক্ষামূলক জোট হিসেবে চিহ্নিত না করে তিনি বলেন, "এটি পুরোপুরি অর্থনৈতিক প্রকল্প। এটি তৃতীয় কোনো পক্ষবিরোধী নয় এবং এ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেনি।"
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হবে।"
রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন যে একটি নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে, তাও জানান তিনি। বলেন, "রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই একমাত্র টেকসই সমাধান। রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা দুই দেশের (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। তবে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা না এলে তাৎক্ষণিক প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়।"
সম্প্রতি বাংলাদেশে চীনা যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, "আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। চীন নিজস্ব কারিগরি বিশেষজ্ঞদের একটি দল খুব শিগগিরই ঢাকা পাঠাবে। তারা তদন্ত করবে এবং প্রয়োজনে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।