পটুয়াখালী থেকে ঢাকার পথে তিনটি লঞ্চে রওনা হয়েছেন জামায়াত ইসলামী’র প্রায় ১৫ হাজার কর্মী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশ ঘিরে রাজনীতিতে বাড়ছে উত্তেজনা ও জনসমাগম।
ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াত ইসলামী যে বিশাল সমাবেশের ডাক দিয়েছে, তা ঘিরে এরইমধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করেছে। এই সমাবেশে যোগ দিতে পটুয়াখালী জেলা থেকে এক বিশাল বহর রওনা দিয়েছে ঢাকার দিকে।
বিশেষ করে শুক্রবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যাবেলা পটুয়াখালী সদর, বাউফল ও গলচিপা থেকে পৃথক তিনটি বড় লঞ্চে যাত্রা শুরু করেন জামায়াত ইসলামী’র প্রায় ১৫ হাজারের মতো নেতাকর্মী। জেলা জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, লঞ্চগুলো যাত্রা শুরু করার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন, তবে যাত্রা নিশ্চিত করতে সংগঠনটি সড়কপথেও বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক শহিদুল্লাহ আল কায়সারী জানান, আমরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে এই যাত্রার আয়োজন করেছি। ১৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী নিয়ে আমরা ঢাকায় যাচ্ছি। সারা দেশ থেকেই লাখো জনতা অংশ নেবেন বলে আমরা আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, এই সমাবেশ থেকেই আমরা দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী রাজনীতির একটি দিকনির্দেশনা দেবো। দেশের মানুষ পরিবর্তনের অপেক্ষায় আছে। সে কারণেই সাধারণ কর্মীদের মাঝে এত উদ্দীপনা।
জানাজানি অনুযায়ী, শুধু পটুয়াখালী নয়, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনা, বরগুনা ও কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও দলে দলে জামায়াতের কর্মীরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। রেলপথ, বাস, মাইক্রোবাস এমনকি ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাইক ব্যবহার করে নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন।
এদিকে, শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় ছোট ছোট মিছিল, ব্যানার-ফেস্টুন ও স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে পরিবেশ। অনেককে মেট্রোরেলের ভেতরে গন্তব্যে যাওয়ার পথে দলে দলে যাত্রা করতে দেখা গেছে।
একাধিক জামায়াত নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এমন প্রকাশ্য ও বড় পরিসরের জমায়েত করছে জামায়াত ইসলামী। এটি দলটির জন্য কৌশলগত ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ।
এই সমাবেশ এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন দেশের রাজনৈতিক ময়দান চরম অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। গোপালগঞ্জে এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার অভিযোগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) অংশগ্রহণ এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক বিভাজনের প্রেক্ষাপটে এই সমাবেশে জনতার উপস্থিতি বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।
জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনী ইস্যু, সংস্কার ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে এই সমাবেশের মাধ্যমে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরবে। একইসঙ্গে পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কথা ও অবস্থান জানাতে চান। দেশের মানুষ আজ একটি বিশ্বাসযোগ্য ও জনবান্ধব রাজনৈতিক পরিবর্তন চায়।
সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশ শুধুই একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং এটি হয়ে উঠছে জাতীয় রাজনৈতিক আবহে একটি মোড় ঘোরানোর সম্ভাব্য সূচনা।