close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ঠাকুরগাঁওয়ে বাঁশ শিল্পের টিকে থাকার সংগ্রাম

শামীম রেজা avatar   
শামীম রেজা
****

ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া এলাকায় অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র গ্রামে বাঁশ শিল্পের ঐতিহ্য এখনো অটুট রয়েছে। এই অঞ্চলে প্রায় ১০ থেকে ২০টি পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রাচীন এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরেছে। আধুনিকতার ছোঁয়া এবং বিভিন্ন প্লাস্টিক ও ইস্পাতের পণ্যের সহজলভ্যতার কারণে বাঁশ শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। তবে, রুহিয়ার এই পরিবারগুলো তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।

বাঁশ শিল্প বাংলাদেশের একটি প্রাচীন শিল্প। এই শিল্পের মাধ্যমে তৈরি হয় ঝুড়ি, চালনী, টোকরি, মাদুর প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া অঞ্চলের মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই শিল্পের সাথে জড়িত। তারা বাঁশ কেটে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। রুহিয়ার স্থানীয়রা মনে করেন, এই শিল্প শুধু তাদের জীবিকার মাধ্যম নয়, বরং তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংকার

বাঁশ শিল্পের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে পণ্য তৈরি ও বাজারজাতকরণ পর্যন্ত নানা ধাপে তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। বর্তমানে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, বাজারে প্রতিযোগিতা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে এই শিল্পের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও, স্থানীয়রা তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর। তারা সরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণের অপেক্ষায় দিন গুনছেন।

বাঁশ শিল্পের এই সংকটময় অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের মাধ্যমে শিল্পীদের সহযোগিতা করা গেলে, তারা তাদের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন। এছাড়া, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্যের প্রচারণা ও বিপণনের মাধ্যমে এই শিল্পকে পুনর্জীবিত করা সম্ভব

বাঁশ শিল্পের টিকে থাকা শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকেই নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি গ্রামের মানুষদের জন্য শুধুমাত্র আয়ের উৎস নয়, বরং তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। স্থানীয় স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এই শিল্পের ওপর কর্মশালা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে, যাতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

রুহিয়ার বাঁশ শিল্পের টিকে থাকার সংগ্রাম আমাদের সমাজে ঐতিহ্যবাহী শিল্পের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজের সকল স্তরের মানুষকে এই শিল্পের প্রতি সহমর্মী হওয়া জরুরি। তাদের সহযোগিতাই পারে রুহিয়ার এই শিল্পকে নতুন জীবন দিতে।

রুহিয়ার এই শিল্পীদের সংগ্রাম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ঐতিহ্যবাহী শিল্পের প্রতি আমাদের দায়িত্ব এবং এর টিকে থাকার জন্য আমাদের অবদান কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

Ingen kommentarer fundet