close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ঠাকুরগাঁওয়ে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা উপজেলা প্রশাসনের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। বিশাল সমাবেশে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও কর্মকর্তারা মিলে সমাজকে মাদকমুক্ত করার অঙ্গীকার করেন।..

ঠাকুরগাঁও জেলায় শুরু হয়েছে এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ—মাদকের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন। সোমবার বিকেলে বলাকা উদ্যান চত্ত্বরে এক বিশাল মাদকবিরোধী সমাবেশের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাইরুল ইসলাম।

এই সমাবেশে একত্রিত হন সদর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এমন জনসম্পৃক্ত সমাবেশ ঠাকুরগাঁওয়ে এই প্রথম যেখানে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা মাদকের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে সমাজ রক্ষার শপথ নেন।

সমাবেশের শুরুতেই জেলার গর্বের মুহূর্ত তুলে ধরা হয়। রংপুর বিভাগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় শ্রেষ্ঠ জেলা প্রশাসক নির্বাচিত হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাইরুল ইসলাম। এই সম্মাননার মাধ্যমে সভায় এক ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে পড়ে—ঠাকুরগাঁও এগিয়ে যাচ্ছে নেতৃত্বের সাহসে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউএনও খাইরুল ইসলাম। তাঁর ভাষণ ছিল স্পষ্ট, কঠোর ও অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি বলেন, “এই সমাজ আমাদের, এই সন্তানরা আমাদের—তাদের বাঁচাতে হলে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আজ থেকে আমরা সেই যুদ্ধে নেমেছি।”

জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, “মাদকের ভয়াবহতা আমাদের সমাজের গভীরে ঢুকে পড়েছে। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ—সবাই মিলে কাজ করলেই আমরা পারবো এই বিষাক্ত নেশার চক্র ভেঙে দিতে।”

পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। শুধুমাত্র আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষে একে দমন করা সম্ভব নয়। তাই আজকের এই সম্মিলিত পদক্ষেপ আমাদের জয় নিশ্চিত করবে।”

সমাবেশে যোগ দেন জেলার শীর্ষ কর্মকর্তারা, ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ থেকে শুরু করে সচেতন নাগরিকরা। এই সমাবেশকে ঘিরে জনমনে এক নবজাগরণ তৈরি হয়েছে।
সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বার্তা—মাদক শুধু অপরাধ নয়, এটি ধ্বংসের হাতছানি। আর এই ধ্বংস থামাতে হলে সবাইকে নিতে হবে স্বতঃস্ফূর্ত ভূমিকা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এই ঘোষণা শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। প্রতিটি ইউনিয়নে নিয়মিত মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক সভা, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ক্যাম্পেইন, স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা পাঠ এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একইসঙ্গে একটি মাদকবিরোধী বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে যা নিয়মিত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাসিন্দা জাহিদ হাসান বলেন, “এই প্রথম দেখছি প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ এক হয়ে মাঠে নামছে। আমরা সাধারণ মানুষ পাশে থাকব। আমাদের সন্তানদের রক্ষার এই যুদ্ধে আমরাও সৈনিক।”

মাদকের বিরুদ্ধে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার এই ঐক্যবদ্ধ ঘোষণাটি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। একে শুধুমাত্র একটি সমাবেশ মনে করলে ভুল হবে—এটি এক নতুন সামাজিক আন্দোলনের সূচনা।
যেখানে প্রশাসন আর জনগণের ভেতর কোনও ফারাক নেই, বরং আছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজ রক্ষার অঙ্গীকার।

לא נמצאו הערות