টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড, দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর, বর্তমানে এক সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বিগত সরকারের নীতিমালা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে টেলিটকের আজকের এই অবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, 'বিগত সরকার টেলিটককে চূড়ান্ত পর্যায়ে অকার্যকর রেখে গেছে। এটা এখন আমাদের গলায় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের প্রধান মোবাইল কোম্পানিগুলোর তুলনায় টেলিটকের বেজ স্টেশন বা মোবাইল টাওয়ার সংখ্যা অত্যন্ত কম। টুজি'তে প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ এবং ফোরজি'তে দশ ভাগের একভাগ টাওয়ার রয়েছে টেলিটকের। এরকম কমসংখ্যক টাওয়ারের মাধ্যমে মানসম্পন্ন সেবা প্রদান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় টেলিটকের বিনিয়োগ না থাকায় তরঙ্গও নষ্ট হচ্ছে।
মঙ্গলবার এক ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে টেলিটক সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে ফয়েজ আহমদ বলেন, টেলিটক তার যাত্রা শুরু থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় স্পেকট্রাম চেয়ে আসছে, তবে অন্যান্য বেসরকারি অপারেটরের তুলনায় এটি বরাবরই কম স্পেকট্রাম পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, 'শুরুর দিকে টেলিটক সিমের প্রতি নাগরিকদের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এক-দেড় দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক অর্জন করতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে টেলিটকের দুর্বল ম্যানেজমেন্টকে দায়ী করেন তিনি। এছাড়া, বিগত সরকারের সময়ে জি-টু-জি চুক্তিতে আনা ফান্ড দুর্নীতির কারণে অপব্যয় এবং লুটপাট হয়েছে।'
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও উল্লেখ করেন যে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে যেখানে টেলিটকের স্পেকট্রাম বরাদ্দের বিপরীতে বিটিআরসির বকেয়া অর্থ ইক্যুইটি খাতে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাব অনুমোদিত হলে টেলিটকের স্পেকট্রাম সংক্রান্ত বকেয়া দায় নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব মনে করেন, টেলিটক রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি হওয়ার কারণে তরঙ্গ ক্রয়ের জন্য মূলধন সরকারের বরাদ্দকৃত ফান্ডের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের ন্যায় নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের অনুকূলে তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া যায় কিনা, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, 'দুর্যোগ প্রবণ অঞ্চলে টেলিটক কভারেজ সম্প্রসারণের গুরুদায়িত্ব পালন করছে যেখানে বাণিজ্যিক প্লেয়াররা যেতে চায় না। বাজার প্রতিযোগিতা এবং গ্রাহকদের সুরক্ষার জন্য তরঙ্গ বরাদ্দ প্রক্রিয়াকে প্রতিযোগিতামূলক রাখা প্রয়োজন।' তিনি আরও যোগ করেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মত দেশগুলোতে সরকারি মালিকানাধীন টেলিকম কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম স্পেকট্রাম বরাদ্দের চর্চা করে।
এই পরিস্থিতিতে, ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, টেলিটকের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং গ্রাহক সেবা উন্নত করতে হলে সরকারের পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং দূরদর্শী পরিকল্পনার প্রয়োজন। এই প্রেক্ষাপটে, দেশের টেলিকম শিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ এবং প্রয়োগে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।