মধ্যপ্রাচ্য যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ইরান ও ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের চলমান উত্তেজনা এখন এক ভয়াবহ মোড় নিয়েছে। সেই উত্তেজনারই সর্বশেষ ঘটনা—ইরানের রাজধানী তেহরানের দক্ষিণে কোম শহরে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ বিমান হামলা।
এই হামলায় একটি আবাসিক ভবন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে মাত্র ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ‘তাসনিম’। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাও এই খবর প্রচার করেছে।
হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত দুজন। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ঠিক কী ছিল ইসরায়েলের মূল লক্ষ্যবস্তু, তা এখনও স্পষ্টভাবে জানায়নি স্থানীয় প্রশাসন কিংবা নিরাপত্তা বাহিনী।
আজ শনিবার সকাল থেকেই ইরানের রাজধানী তেহরান এবং ইসফাহান শহরের আকাশজুড়ে শোনা গেছে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ভিডিও ও ছবি।
বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এসব ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানায়, এটি নিছক গুজব নয়, সত্যিকারের ভয়ংকর বিস্ফোরণের চিত্র।
অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, মালারদ এলাকায় একাধিক বিকট শব্দে কেঁপে উঠে আশপাশের ভবন। নাজাফাবাদ শহরেও একই দৃশ্য। তবে সেখানে ইসরায়েলি হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
আজ শনিবার ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘাতের নবম দিন। এর আগেও একাধিকবার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আজকের ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ এবার হামলার লক্ষ্যবস্তু সাধারণ আবাসিক ভবন।
নিহত হয়েছে এক কিশোর, আহত হয়েছেন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক। বিষয়টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
ইরান ও ইসরায়েল দুই পক্ষই গত কয়েকদিন ধরে একে অপরকে সামরিকভাবে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই সংঘাতে শুধু সামরিক কাঠামোই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষও।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে ইসরায়েলি বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি আংশিক ধ্বংস হয়েছে, অন্যদিকে ইরানের বহু স্থানে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবুও কেউই পিছু হটছে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধ যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—প্রভাব ফেলবে গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও।
জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধ এখন কেবল একটি সীমিত পরিসরের দ্বন্দ্ব নয়—এটি যে কোনো সময় পুরো অঞ্চলে বিস্তৃত হয়ে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
বিশ্ববাসীর উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার কিংবা অন্যান্য ধ্বংসাত্মক প্রযুক্তির আশঙ্কা।
তেহরানের কোম শহরে ইসরায়েলের এই হামলা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের শেষ কোথায়? সাধারণ মানুষের প্রাণহানির এই ধারাবাহিকতা যদি চলতেই থাকে, তবে কেবল দুই দেশের নয়—সমগ্র বিশ্বকেই তার মূল্য চুকাতে হতে পারে।