বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়ালো বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর বিস্ফোরক মন্তব্য। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা পলাতক আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য সক্রিয়ভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এক্ষেত্রে তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে টার্গেট করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
রিজভী বলেন, -লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পরই একটি নির্দিষ্ট মহল অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। ভারতের কিছু প্রভাবশালী নীতিনির্ধারক সেই বৈঠকের পর থেকেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, “আসলে ভারত শেখ হাসিনার পতন মেনে নিতে পারছে না। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের দুঃশাসনের পরেও সেই দলটিকে আবারো পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। আর এ পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে ভারতীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী।”
রিজভীর ভাষ্যমতে, ১৬ বছর ধরে তারেক রহমানকে ঘিরে ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। এই অপচেষ্টা আজও চলছে। ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক হতেই ভারতীয় মিডিয়া এবং তাদের প্রভাবিত চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে। একের পর এক ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। শুধু মিডিয়া নয়, বিদেশে থাকা আওয়ামীপন্থী গোষ্ঠী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের মাধ্যমেও এই অপপ্রচারের জাল বিস্তার করা হচ্ছে।
তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া বরাবরের মতোই নিয়ন্ত্রিত। তারেক রহমানকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করাই যেন তাদের অন্যতম কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মিডিয়াগুলোকে আবার বিদেশি মেন্টরদের দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে।
রিজভী এ সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ১৬ বছর যারা শাসন করেছে তারা এই দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম-খুন চালিয়েছে। লাখ লাখ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। এখন তাদের বাড়িঘর কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে। যারা এতদূর যেতে পারেনি তারা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেই আশ্রয় নিয়েছে।
তার কথায়, এই চক্রটাই এখন ভারতের সহায়তায় আবারো ক্ষমতায় ফেরার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অথচ জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, অচিরেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই হবে বলে আমরা আশা করি।
সবশেষে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, -এ দেশের ১৮ কোটি মানুষ নির্ধারণ করবে, কে হবে তাদের নেতা। পৃথিবীর যত বড় শক্তিধর দেশই হোক না কেন, যদি তারা ভাবে বাংলাদেশকে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে বা বশে রাখবে—তাহলে তারা ভুল করবে। বাংলাদেশের মানুষ কখনোই পরাধীনতা মেনে নেয়নি, আগামীতেও নেবে না।
রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যে দেশের রাজনীতিতে যে নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে ভারতকে সরাসরি দায়ী করা এবং তারেক রহমানকে কেন্দ্র করে চক্রান্তের অভিযোগ—রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সামনে এই ইস্যু কতদূর গড়ায়, সেদিকে তাকিয়ে দেশবাসী।