বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান ও বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি আগামী ২০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে অনুষ্ঠিত হবে।
বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ আসামিদের খালাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। আগামী ২০ আগস্ট, বুধবার, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এই গুরুত্বপূর্ণ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে টানা তৃতীয় দিনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেওয়া হয়। এর আগে মামলার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছিল হাইকোর্ট, যা রাষ্ট্রপক্ষের তীব্র আপত্তির মুখে পড়ে।
রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ। অন্যদিকে, আসামিপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এ ছাড়া বিএনপিপন্থী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ আরও অনেকে আদালতে উপস্থিত থেকে শুনানিতে অংশ নেন।
এর আগে গত ৩১ জুলাই এ মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি সম্পন্ন হয়। আর প্রথম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় গত ১৭ জুলাই। ধারাবাহিক শুনানির অংশ হিসেবেই ২০ আগস্টের তারিখ ধার্য করা হলো।
হাইকোর্ট গত বছরের ১ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের খালাসের রায় ঘোষণা করে। এই রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘ দুই দশক আগে সংঘটিত ভয়াবহ ওই ঘটনার আসামিরা আইনের চোখে মুক্তি পান। পরে রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে, যা আদালত মঞ্জুর করে নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়।
হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় প্রকাশিত হয় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আলাদা দুটি মামলায়—হত্যা মামলা ও বিস্ফোরক মামলায়—পৃথক লিভ টু আপিল করে। আবেদন দুটি মার্চ মাসে চেম্বার জজ আদালতে ওঠে এবং নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য প্রেরণ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন আবারও আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে এ মামলা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে সংঘটিত ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় পুরো দেশ কেঁপে উঠেছিল। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও, সেদিন প্রাণ হারান অন্তত ২৪ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমান। আহত হন দলের আরও তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। বিচারিক আদালত দীর্ঘ তদন্ত ও বিচার শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী বাবরকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। তবে হাইকোর্ট সেই রায় বাতিল করে খালাস দেন আসামিদের।
বর্তমানে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের ফলে আবারও এ মামলার নতুন মোড় শুরু হলো। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০ আগস্টের শুনানি মামলার ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
দুই দশক পেরিয়ে গেলেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ক্ষত আজও বাংলাদেশের রাজনীতি ও জনমনে রয়ে গেছে। নিহতদের পরিবার এবং আহতদের জন্য এখনো ন্যায়বিচারের অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের আসন্ন শুনানি তাই শুধু আইনি নয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও গভীর তাৎপর্য বহন করছে।