প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকটিকে বাংলাদেশ রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, এই বৈঠক ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য কফিনে শেষ পেরেক। এটি শুধুই একটি বৈঠক নয়—বরং বাংলাদেশের আগামীর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দিকনির্দেশনার প্রতীক। তার ভাষায়, “এটি ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য গেম ওভার মুহূর্ত।”
লন্ডন সফর ঘিরে ইতিহাস
বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রীয় সফরের সময়। এ সফরের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ গড়ে উঠেছে। প্রেস সচিবের দাবি, এই বৈঠক মূলত সেই সকল শক্তির জন্য সরাসরি বার্তা, যারা এতদিন উন্নয়ন ও জবাবদিহিতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এ সফরে অধ্যাপক ইউনূস ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছ থেকে একটি মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার গ্রহণ করেন। শুধু তাই নয়, রাজা চার্লসের সঙ্গে একান্তে ৩০ মিনিটের বৈঠক করেন, যা ব্রিটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আন্তর্জাতিক সাড়া
প্রেস সচিব শফিকুল আলম আরও জানান, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) বাংলাদেশের একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সংস্থাটি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একজন শীর্ষ সহযোগীর নামে থাকা প্রায় ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ৩২০টি সম্পত্তি জব্দ করেছে।
এটিকে এনসিএ তাদের ইতিহাসের “সবচেয়ে বড় একক সম্পত্তি জব্দের ঘটনা” হিসেবে বর্ণনা করেছে। এতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের প্রতি গভীর আগ্রহ ও সহায়তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সম্পদ পুনরুদ্ধারের রূপরেখা
শফিকুল আলম উল্লেখ করেন, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বাংলাদেশের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান একাধিক বৈঠক করেছেন। এই আলোচনা ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদের আন্তর্জাতিকভাবে পুনরুদ্ধারের পথকে সুগম করবে।
তিনি বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমরা শুধু ব্রিটেনে নয়, বিশ্বব্যাপী কাজে লাগাতে পারবো। এটি অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় অর্জন।”
রোহিঙ্গা ইস্যুতেও মিলেছে আশা
প্রেস সচিব আরও বলেন, এই সফরে কেবল রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অগ্রগতি নয়, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং ব্রিটেনের কূটনৈতিক মহলে বাংলাদেশ সরকারকে সক্রিয় সমর্থন দেওয়ার বার্তা স্পষ্ট হয়েছে।
উপসংহার
তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের মধ্যে এ ঐতিহাসিক বৈঠক ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অবসান ঘটানোর পথে এক সাহসী পদক্ষেপ। আর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক অগ্রগতি ও দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান দেখিয়ে দিচ্ছে—বাংলাদেশ এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে।
এটি কেবল একটি সাক্ষাৎ নয়, বরং একটি বার্তা—যেখানে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা ছাড়া কেউই নিরাপদ নয়। ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য এটি বাস্তবিক অর্থেই কফিনে শেষ পেরেক।
সূত্র: রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে ‘বাসস’-কে, কিন্তু পুরো লেখাটি ১০০% মৌলিকভাবে পুনর্লিখিত হয়েছে।