আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাঠে নামা ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) কুষ্টিয়া শহরের একটি রেস্টুরেন্টে একটি জাতীয় দৈনিকের মাল্টিমিডিয়া শাখার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে চাঞ্চল্যকর কিছু মন্তব্য করেন।
প্রচারণার সময় তাঁর বিরুদ্ধে নারীঘটিত অপপ্রচারের বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, “আমার নামে যেসব প্রচার চলছে তা নমিনেশন ঘোষণার আগে কল্পনাতেও ছিল না। একটি মহল মনে করছে, আমার নামে নারীসংক্রান্ত ইস্যু ছড়ালে জনগণ আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে। তারা ভেবেছে, আমার ভোট কমে যাবে। কিন্তু তারা ভ্রান্ত।
আমি কী পাস করার জন্য ভোটে দাঁড়িয়েছি?" — এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে আমির হামজা বলেন, “আমার দল আমাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। জনগণ যদি মনে করে আমি উপযুক্ত, তাহলে ভোট দেবে। আর কেউ যদি আমার চেয়েও যোগ্য হয়, তাকেই বেছে নেবে।
এই বক্তব্যে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়, নির্বাচনের ব্যালট নয়, বরং নীতিগত লড়াইয়েই তিনি বিশ্বাসী।
নিজ দলের আদর্শ ও নীতিশৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমির হামজা বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর আমির ঘোষণা দিয়েছেন, দলের কোনো প্রার্থী যদি নির্বাচনের আগে-পরে ৫ বছরের মধ্যে এক টাকাও অতিরিক্ত উপার্জন করে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেন দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতি, “বাংলাদেশের অন্যান্য দল যদি এ রকম সাহসী ঘোষণা দিতে পারতো, তাহলে হয়তো অর্ধেক রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে দাঁড়াতে পারত না।”
এ সময় তিনি দেশের রাজনীতিতে শুদ্ধতার সংকট উল্লেখ করে বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য প্রতিটি দলের ভেতর থেকেই আসা উচিত। তাহলেই প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন আমির হামজা। বলেন, “সাংবাদিকদের সহযোগিতা ছাড়া কোনো গণতন্ত্র টিকে না। অথচ বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশে সাংবাদিকরা আজও প্রকৃত মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। বাইরের বিশ্বের তুলনায় এখানকার সাংবাদিকদের অবস্থান দুর্বল, যা পরিবর্তন জরুরি।
তিনি আরও বলেন, “হাতে কলম থাকলেই যা খুশি লেখা যাবে না। সাংবাদিকদের অবশ্যই তথ্য যাচাই করে, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। কেউ যেন বিভ্রান্তিকর বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের হাতিয়ার না বানায় সাংবাদিকতাকে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, এডিটরস ফোরাম কুষ্টিয়ার সভাপতি মুজিবুল শেখ, সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ এনামুল হক, বাংলাভিশনের জেলা প্রতিনিধি হাসান আলী, কালের কণ্ঠের মাল্টিমিডিয়া জেলা প্রতিনিধি খালেদ সাইফুলসহ জেলার শীর্ষ সাংবাদিকরা।
এমপি পদপ্রার্থী মুফতি আমির হামজার বক্তব্য তার রাজনৈতিক সচেতনতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। নির্বাচনের মাঠে তিনি শুধু একটি দলীয় প্রার্থী নন, বরং রাজনৈতিক শুদ্ধতার পক্ষে একটি কণ্ঠস্বর হয়ে উঠছেন। অপপ্রচার বা ব্যক্তিগত আক্রমণ তাকে দমাতে পারবে না—এই বার্তাই দিয়েছেন তিনি জনতার উদ্দেশ্যে।