বাংলাদেশের সংগীত জগতের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ, গায়ক, সুরকার ও অভিনেতা তাহসান খানকে ‘জিহাদি’ বলে আক্রমণ করেছেন বিতর্কিত নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সামাজিক মাধ্যমে এই মন্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ভক্ত ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত এক কনসার্টে তাহসান তার সংগীতজীবনের বিদায় ঘণ্টা বাজানোর ইঙ্গিত দেন। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে গান, সুর ও অভিনয়ে ভক্তদের হৃদয় জয় করা এই তারকা মঞ্চ থেকে ধীরে ধীরে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “মেয়ে বড় হচ্ছে। এখন কি দাঁড়ি রেখে স্টেজে দাঁড়িয়ে এমন লাফালাফি করা ভালো লাগে?”
এই কথাগুলো প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। অনেক ভক্ত দুঃখ প্রকাশ করেন, আবার কেউ কেউ তাহসানের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানান। তবে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন এ প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাহসানের এই বক্তব্যের আড়ালে কি ধর্মীয় বা উগ্র মতাদর্শ কাজ করছে?
তসলিমা নাসরিন সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, “দাড়ি রেখে বুঝি স্টেজে গান গাওয়া নিষেধ? মেয়ে বড় হলে গান গাওয়া বন্ধ করা উচিত? লাফালাফি করতে না চাইলে লাফালাফি না করেও গান গাওয়া যায়। তাহসানের দাঁড়ি কি ইসলামী দাঁড়ি? যদি তাই হয়, তবে হয়তো তিনি ইসলাম ব্যবসায়ীদের ফতোয়া মেনে গান ছেড়ে দিচ্ছেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যে সময় দেশে জিহাদি জঙ্গিরা গান-বাজনা নিষিদ্ধ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, ঠিক তখনই তাহসান গান ছাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এতে কি তিনি পরোক্ষভাবে সেই জিহাদিদের সমর্থন করছেন? তিনি কি মনে করেন যাদের দাঁড়ি আছে বা যাদের মেয়েরা বড় হয়েছে, তাদের আর গান-বাজনা করা উচিত নয়?”
তসলিমা আরও অভিযোগ তোলেন, “যেসব জিহাদি শক্তি বাউল উৎসব বন্ধ করছে, লালন মেলা বন্ধ করছে, স্কুলে গানের শিক্ষক তুলে দিচ্ছে, মাজারে গানের আসর ভেঙে দিচ্ছে — তাহসান কি তাদের কার্যকলাপের সঙ্গে একমত? তিনি কি সেই একই চিন্তাধারা থেকে নিজের ক্যারিয়ার থেকে সরে যাচ্ছেন?
তসলিমার এই মন্তব্যের পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, তাহসানের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে এভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে টেনে আনা অযৌক্তিক। আবার অনেকে বলছেন, একজন সেলিব্রিটি হিসেবে তাহসানের এমন বক্তব্য সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
উল্লেখ্য, তাহসান তার সংগীতজীবন শুরু করেন ২০০৪ সালে প্রথম একক অ্যালবাম “কিছু কথা” প্রকাশের মাধ্যমে। তবে এরও আগে তিনি ১৯৯৮ সালে জনপ্রিয় ব্যান্ড “ব্ল্যাক”-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ২০১২ সালে তিনি নতুন ব্যান্ড “তাহসান অ্যান্ড দ্য সুফিজ” গঠন করেন।
তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে — “চোখে চোখে কথা হতো”, “যদি কোনোদিন”, “চলে যাও তবে”, “আলো”, “ছুঁয়ে দিলে মন”, “কতদূর” এবং “প্রেম তুমি”। এগুলো এখনও ভক্তদের কাছে সমান জনপ্রিয়।
ভক্তদের একাংশ মনে করেন, ব্যক্তিগত কারণেই তাহসান ধীরে ধীরে সংগীতজীবন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তসলিমা নাসরিনের অভিযোগের কারণে বিষয়টি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে — তাহসান কি সত্যিই জিহাদিদের চাপের মুখে গান ছাড়ছেন, নাকি এটি শুধুই তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত?
এই বিতর্ক থামার কোনো লক্ষণ এখনও নেই। বরং দিন যত যাচ্ছে, অনলাইনে আলোচনা ও সমালোচনা ততই বেড়ে চলেছে। ভক্তরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, তাহসান নিজে এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেন কি না।