close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

সুপ্রিম কোর্ট গঠনের আগেই জামায়াতের ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক, নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসংগত?..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী শিশির মনির দাবি করেছেন, ১৯৪১ সাল থেকেই ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক জামায়াতের রাজনৈতিক পরিচয়। অথচ ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের রেজ্যুলেশনের পর নির্বাচন কমিশন এই প্রতীক নিষিদ্ধ করে। আইনি ..

সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের এক সরগরম দুপুরে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন—‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক জামায়াতের ইতিহাসে এক গভীর শিকড় গাড়া পরিচয়। এই প্রতীক এখন রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে, যা ঘিরে আদালত ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যেও চলছে টানাপোড়েন।

শিশির মনির বলেন, “বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা ১৯৪১ সালে। তখন থেকেই তাদের দলীয় প্রতীক ছিল ‘দাঁড়িপাল্লা’। অথচ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭২ সালে। অর্থাৎ আদালতের প্রতিষ্ঠারও বহু আগেই জামায়াত এই প্রতীক নিয়ে রাজনীতি করছিল।”

তাঁর মতে, প্রতীকের এই ঐতিহাসিক ব্যবহারকে অস্বীকার করে প্রতীক বাতিল করা একটি অন্যায়। শিশির মনির আরও বলেন, “বাংলাদেশে সংসদীয় রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী বরাবরই অংশ নিয়েছে। জনগণের ভোটে এমপি ও মন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু এরপরও নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত দলের নিবন্ধন হাইকোর্ট একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের মাধ্যমে বাতিল করে দেয়।”

এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জামায়াত পক্ষ থেকে আপিল করা হয় এবং সম্প্রতি সেই আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১ জুন মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান ও বিতর্কিত রেজ্যুলেশন:

শিশির মনির অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট একটি রেজ্যুলেশনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দেয়, যেখানে বলা হয়—‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকটি আদালতের ন্যায়বিচারের প্রতীক হওয়ায় রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীদের বরাদ্দ না দিতে হবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, যদি ইতিমধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে, তবে তা বাতিল করতে হবে।

এই চিঠির ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালের ৯ মার্চ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বাতিল করে একটি গেজেট প্রকাশ করে।

শিশির মনিরের বক্তব্য, “প্রতীক বরাদ্দের ক্ষমতা কেবল নির্বাচন কমিশনের, আদালতের নয়। তাই আমরা আজ আদালতের কাছে একটি পর্যবেক্ষণ চেয়েছি—যাতে স্পষ্ট হয়, প্রতীক নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আশা করি, চূড়ান্ত রায়ে এটি অন্তর্ভুক্ত হবে।”

প্রতীকের সাংবিধানিক গুরুত্ব বনাম ন্যায়বিচারের প্রতীক:

সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে যেটি বলা হচ্ছে তা হলো—‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকটি আদালতের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হয়ে আসছে সুপ্রিম কোর্টের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই। এটি ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষতার প্রতীক। এই প্রতীক যদি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।

ফুলকোর্ট সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বলা হয়, ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকটি শুধুমাত্র সুপ্রিম কোর্টের ন্যায়বিচার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হবে এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠন যেন এটি ব্যবহার না করে, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক তাৎপর্য:

এই মামলা শুধু প্রতীক ঘিরে আইনি বিতর্ক নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ভবিষ্যৎ অংশগ্রহণেরও একটি বড় দিকচিহ্ন। জামায়াত যদি আদালতে প্রতীক পুনরুদ্ধারে সফল হয়, তাহলে দলটি নির্বাচনী রাজনীতিতে পুরোদমে ফিরে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। অন্যদিকে আদালত যদি সুপ্রিম কোর্টের রেজ্যুলেশনকে বৈধ বলে ধরে নেয়, তাহলে জামায়াতকে নতুন করে দলীয় পরিচয়ের পুনঃসংজ্ঞায়ন করতে হবে।

১ জুন মামলার রায়ে কী আসে, তার উপর নির্ভর করছে রাজনৈতিক এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator