close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

সুন্দরবনে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা: দুশ্চিন্তায় উপকূলীয় বনজীবী, সহায়তা নিয়ে অসন্তোষ..

এস এম তাজুল হাসান সাদ avatar   
এস এম তাজুল হাসান সাদ
****

সুন্দরবনে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা: দুশ্চিন্তায় উপকূলীয় বনজীবী, সহায়তা নিয়ে অসন্তোষ

এস এম তাজুল হাসান সাদ, উপকূলীয় প্রতিনিধি (সাতক্ষীরা) 

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য বনাঞ্চলে প্রবেশ, মাছ ও কাঁকড়া আহরণ, মধু সংগ্রহ এবং পর্যটন কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বনবিভাগ। এ সিদ্ধান্তে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজারো বননির্ভর মানুষ পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তার মুখে।

শনিবার (৩১ মে) সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার আগে সুন্দরবন থেকে ফেরা নৌকাগুলো ব্যস্ত রয়েছে জাল ও সরঞ্জাম খালাসে। কেউ কেউ নৌকা মেরামতের কাজে হাত দিয়েছেন, আবার কেউ নিচ্ছেন দীর্ঘ অবসরের প্রস্তুতি।

নীলডুমুর এলাকার জেলে আল-আমিন জানান, টানা ছয় দিন মাছ ধরে আজ সকালে বাড়ি ফিরেছেন। সামনে তিন মাস রোজগারের পথ বন্ধ—যা তার মতো দিনমজুর জীবিকার ওপর নির্ভরশীলদের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। তিনি বলেন, “সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় নেই, কীভাবে পরিবার নিয়ে চলবো, বুঝতে পারছি না।”

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনে—বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কবাদক এলাকায় ২,৯০০ নৌকার বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) থাকলেও, শ্যামনগর উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার। অথচ সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন মাত্র ৮,৩২৪ জন জেলে। প্রত্যেককে তিন মাসে দুই ধাপে ৭৭ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ জেলেদের।

স্থানীয় জেলে জলিল গাজী বলেন, “এই সময়ে কাঁকড়া ডিম পাড়ে না, বাচ্চাও ফোটে না। কিন্তু তবুও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমাদের রুটিরুজির পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। চাল সবাই পায় না—যারা প্রকৃত জেলে, তারাই সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। কিছু প্রভাবশালী একাধিক বিএলসি বানিয়ে সহায়তা নিয়ে নেয়।”

আরেক বনজীবী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ভালো হলেও এর বাস্তবায়নে বড় দুর্বলতা আছে। সাধারণ জেলেরা বনে ঢুকতে না পারলেও, প্রভাবশালীরা নির্বিঘ্নে সুন্দরবনের গভীরে প্রবেশ করছে।”

এ বিষয়ে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ সহকারী হাবিবুর রহমান বলেন, “প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য প্রতি বছর এই তিন মাস সুন্দরবন থেকে সম্পদ আহরণ ও ইকো ট্যুরিজম বন্ধ রাখা হয়। ইতোমধ্যে ২৬ মে থেকে পাস ইস্যু বন্ধ রয়েছে এবং ৩১ মে’র মধ্যে সব নৌকা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” তিনি আরও জানান, সরকার নির্ধারিত পরিমাণে চাল সহায়তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে স্থানীয়দের দাবি, সহায়তার পরিমাণ ও পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকৃত বনজীবীদের চিহ্নিত করে তাদের তালিকাভুক্ত করাই হবে টেকসই সমাধান।

לא נמצאו הערות