স্ত্রীর পরকীয়ার শিকার! ডিভোর্সের পর ২০ লিটার দুধ দিয়ে ‘পাপমুক্তির’ গোসল যুবকের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বরগুনায় স্ত্রীর পরকীয়ার শিকার এক যুবক ডিভোর্সের পর নিজেকে ‘পাপমুক্ত’ দাবি করে ২০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করলেন। দুই সন্তান রেখে স্ত্রী চলে গেছেন প্রেমিকের সঙ্গে। ঘটনার নাটকীয় মোড় সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল।..

বরগুনার বামনা উপজেলার এক যুবকের জীবনে ঘটে গেলো এক নাটকীয় ও হৃদয়বিদারক ঘটনা, যা এখন আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ১২ বছরের বৈবাহিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে, স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে ভেঙে পড়েন মোঃ হেল্লাল ফকির। ডিভোর্সের পর নিজেকে 'পাপমুক্ত' করার উদ্দেশ্যে তিনি ২০ লিটার দুধ দিয়ে গোসল করেন।

ঘটনাটি ঘটে বামনা উপজেলার দক্ষিণ বামনা গ্রামে। স্থানীয়রা জানায়, মোঃ হেল্লাল ফকির প্রায় ১২ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন লিপি আক্তারকে। সুখের সংসারেই জন্ম নেয় একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। কিন্তু সেই সুখ টিকেনি দীর্ঘদিন।

স্ত্রীর আচরণে ধীরে ধীরে আসে পরিবর্তন। হেল্লাল জানান, তাদের সংসারে আগে কোনো বড় সমস্যা ছিল না। সবকিছু ভালোই চলছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই স্ত্রীর চালচলনে আসে অস্বাভাবিকতা। পরে জানা যায়, লিপি জড়িয়ে পড়েছেন পরকীয়ার সম্পর্কে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় সংসারে টানাপোড়েন।

এক পর্যায়ে লিপি তার মায়ের বাড়িতে চলে যান এবং সেখানে থাকাকালীন সময়েই কাজীর মাধ্যমে ডিভোর্স পাঠান হেল্লালকে। তিনি বলেন, "আমি চাইনি ডিভোর্স দিতে। সন্তানদের মুখ চেয়ে চেয়েছি তাকে ফেরাতে। কিন্তু সে সিদ্ধান্তে অটল ছিল। আমি শেষ পর্যন্ত হার মানি।"

হেল্লাল বলেন, "আমার দুটি সন্তান—এক ছেলে ও এক মেয়ে। আমি শুধু ওদের কথা ভেবেই সংসারটা রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার চেষ্টায় কোনো কাজ হলো না। উল্টো সে আমাকে ডিভোর্স দিল। এখন আমি নিজেকে ও আমার জীবনকে নতুনভাবে শুরু করতে চাই। তাই দুধ দিয়ে গোসল করে নিজেকে পাপমুক্ত ঘোষণা করলাম।"

মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় বাজার থেকে ২০ লিটার গরুর দুধ সংগ্রহ করে, গ্রামের সবার সামনেই গোসল করেন হেল্লাল। সেই মুহূর্ত কেউ মোবাইলে ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “ঘটনাটি দেখে আমরা সবাই হতবাক। কেউ ভাবতেই পারেনি সে এমন কিছু করবে। তবে মনে হচ্ছে অনেক কষ্ট পেয়েছে সে।”

এদিকে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে হেল্লালের সাহসিকতা ও মানসিক শক্তিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, “যেখানে সমাজে অনেকে পরকীয়ার যন্ত্রণা সহ্য করে চুপ করে থাকেন, সেখানে হেল্লাল সাহস করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।”

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড একজন মানুষের ভেতরে জমে থাকা হতাশা ও মানসিক যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। দুধ দিয়ে গোসলের বিষয়টি ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখে, একজন ব্যথিত মানুষের মানসিক অবস্থান বুঝে দেখা দরকার।

অন্যদিকে, অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—পরকীয়ার মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে সংসার ভেঙে ফেলার এই প্রবণতা কীভাবে সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে? কেন এখন সম্পর্কগুলো এতটা দুর্বল হয়ে পড়ছে?


 

মোঃ হেল্লাল ফকিরের এই ঘটনাটি আমাদের সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে—সম্পর্কে বিশ্বস্ততা কতটা প্রয়োজন, এবং তা ভাঙলে একজন মানুষের জীবন কতটা তছনছ হয়ে যেতে পারে। ২০ লিটার দুধে গোসল হয়তো কোনো সমাধান নয়, তবে এটি একটি যন্ত্রণার আর্তনাদ—যা আমাদের সমাজের বিবেক নাড়া দেয়।

Aucun commentaire trouvé