বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদ কায়েম হবে। তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আগে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, অতীতের গণহত্যার বিচার এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন শেষ করা আবশ্যক। অন্যথায় জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভুলুণ্ঠিত হবে, এবং অতীতের মতো আবারও স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
বুধবার (২ জুলাই) মতিঝিল এলাকায় একটি আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা, যেখানে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের স্মরণে দরিদ্র, এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়।
বুলবুল আরও বলেন, “যখন যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তারা নিজেদের স্বার্থে বারবার সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে। এর ফলেই জন্ম নিয়েছে বৈষম্যপূর্ণ এক বাংলাদেশ। এই বৈষম্য দূর করতে হলে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে মৌলিক সংস্কার আনতে হবে।” তিনি দাবি করেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে বিচার বিভাগ থেকে প্রশাসন পর্যন্ত নিজেদের অনুগত লোক দিয়ে সাজিয়েছে। এমনকি পিলখানা ট্র্যাজেডির মতো ঘটনা ঘটিয়ে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছেদ এনেছে।
তিনি বলেন, “জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়, তার প্রধান কাজ ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। জামায়াতসহ নানা দল সহযোগিতা করলেও কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিজের স্বার্থে সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করেছে।” তার মতে, “জুলাই আন্দোলন কোনো দলের সুবিধা নিশ্চিতের জন্য হয়নি, এটি ছিল বৈষম্যহীন কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের সূচনা।
বুলবুল অভিযোগ করেন, “আওয়ামী লীগ আন্তর্জাতিক আধিপত্যবাদীদের সহায়তায় দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করতে তারা রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মামলা দিয়ে বিচারিক হত্যা করা হয়। এমনকি সাধারণ মুসলমানদের ‘দাঁড়ি-টুপি’ দেখে জামায়াত-শিবির বলে নির্যাতন চালানো হয়।
তিনি দাবি করেন, ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবিতে করা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করে, আওয়ামী লীগ সরকার ছাত্রদের হত্যা করে। তার ভাষায়, “৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে গণভবন অভিমুখে রওনা দেওয়া জনতা এক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দ্বার উন্মুক্ত করে।
সভায় ঢাকা-৮ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, “এই দেশে ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান, অথচ কুরআনের আলোচনা করতে অনুমতি লাগে—এটাই হলো আওয়ামী শাসনের চিত্র।” তিনি অভিযোগ করেন, “আল্লাহ যা হারাম করেছেন, আওয়ামী লীগ তা বৈধতা দিয়ে তাঁর সাথে বিদ্রোহ করেছে, যার ফলে আজ তারা গোষ্ঠীসহ ক্ষমতা হারিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগর সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, “জুলাই শুধু একটি স্মরণ নয়, এটি একটি চেতনা—একটি আন্দোলনের প্রাণশক্তি। সেই চেতনায় ভর করেই আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই ইসলামের আলোকে।” তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “৬ মাসের সাজা জাতির সাথে তামাশা। তার উপযুক্ত শাস্তি ধারাবাহিক ফাঁসি।
আলোচনা সভার পাশাপাশি যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও কদমতলী এলাকায় শহীদদের স্মরণে এতিম ও দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। যাত্রাবাড়ীর শহরপল্লী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এতিমখানায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা-৫ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মো. কামাল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোকাররম হোসেন, এবং সঞ্চালনায় ছিলেন শাহজাহান খান।
এই আয়োজনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মোতাছিম বিল্লাহ, সৈয়দ সিরাজুল হক, আতিকুর রহমান চৌধুরী, শাহাবুদ্দিন খান, মুফতি মোখলেসুর রহমান সহ বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ।
জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে স্পষ্ট, তারা পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে একটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছেন। একইসাথে দেশের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও নৈতিক ব্যবস্থায় পুনঃগঠন চাইছেন—একটি বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে।