আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় বুর্কিনা ফাসোর প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে সৌদি আরবের ২০০টি মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি সৌদি সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন, দেশের জন্য আরও কার্যকর প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে, যা বুর্কিনা ফাসোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
প্রেসিডেন্ট ত্রাওরে বলেন, “আমাদের দেশে প্রচুর মসজিদ রয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো—আমাদের আরও বেশি প্রয়োজন হাসপাতাল, স্কুল এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ। দেশের উন্নয়নে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ক্যাপ্টেন ত্রাওরে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোযোগী হয়েছেন। তার সরকার ইতিমধ্যেই সরকারি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে, যেখানে গৃহায়ন মন্ত্রণালয় নির্মাণ প্রকল্পগুলোর তদারকি করছে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, জনগণকে মৌলিক চাহিদা পূরণের সুযোগ করে দেওয়া। ধর্মীয় অবকাঠামোর চেয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
বাস্তুচ্যুতদের জন্য আবাসন প্রকল্প
ত্রাওরে শুধু অবকাঠামো উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং দেশের গৃহসংকট মোকাবিলায়ও পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিশেষ করে নিরাপত্তাজনিত কারণে বাস্তুচ্যুত জনগণের জন্য ২০২৪ সালের ১২ জুলাই তিনি ১ হাজারটি সামাজিক আবাসন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। তার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি বুর্কিনাবেকে আবাসন সুবিধা প্রদান করা হবে।
আইএমএফ ঋণও নেননি ত্রাওরে
অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ত্রাওরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছেন। বরং, দেশীয় সম্পদ ও সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি কৃষি, স্থানীয় শিল্প ও টেকসই উন্নয়নের ওপর জোর দিচ্ছেন।
ত্রাওরের দৃষ্টিভঙ্গি: শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
সৌদি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে প্রেসিডেন্ট ত্রাওরে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন—তার প্রশাসনের অগ্রাধিকার ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। তিনি মনে করেন, এসব উন্নয়নমূলক কাজই বুর্কিনা ফাসোর ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করবে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট ত্রাওরের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কেউ তার সিদ্ধান্তকে সাহসী ও বাস্তবসম্মত বলছেন, আবার কেউ এটিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিতর্কিত বলে মনে করছেন। তবে তার এই পদক্ষেপ দেশকে আরও আত্মনির্ভরশীল করার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।