মুসলিম বিশ্বের জন্য বহুদিন ধরে আলোচিত ‘নিজস্ব ন্যাটো’ গঠনের স্বপ্ন এবার বাস্তব রূপ নেওয়ার পথে। সম্প্রতি সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক ঐতিহাসিক সামরিক চুক্তি বিশ্ব রাজনীতির মানচিত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এই চুক্তির মাধ্যমে দুটি দেশ পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে – পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ মানে হবে সৌদি আরবের ওপর আক্রমণ, আর সৌদির ওপর আক্রমণ মানে হবে পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ। এই ধারা ন্যাটোর বিখ্যাত ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর সাদৃশ্য বহন করে, যেখানে একটি সদস্য রাষ্ট্রের ওপর হামলা মানে পুরো জোটের ওপর হামলা হিসেবে ধরা হয়।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এক বিবৃতিতে জানান, শুধুমাত্র সৌদি আরবই নয়, ইরান, তুরস্ক, মিশর ও কাতারের মতো প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলোও এই সামরিক সহযোগিতায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, “যদি আরও দেশ এই চেইনে যুক্ত হয়, তাহলে একসময় এটি নতুন ধরনের ন্যাটো হয়ে উঠবে, যার নেতৃত্ব দেবে পাকিস্তান – একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরবের বিশাল তেলভিত্তিক অর্থনৈতিক শক্তি এবং পাকিস্তানের উন্নত সামরিক সক্ষমতা একত্রিত হলে, তা পশ্চিমা জোটগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এটি মুসলিম দেশগুলোকে একক প্রতিরক্ষা ছাতার নিচে এনে এক নতুন শক্তির ভারসাম্য গঠন করবে। এই জোট বাস্তবায়িত হলে বৈশ্বিক রাজনীতির শক্তির কাঠামো আমূল পরিবর্তন হতে পারে।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায় – অর্থনীতি, প্রযুক্তি এবং রাজনৈতিক ঐক্যের ক্ষেত্রে এখনো মুসলিম বিশ্বের মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা ছাড়া এমন জোট কার্যকর হবে না বলে মনে করেন কিছু বিশেষজ্ঞ। তারা মনে করেন, শক্তিশালী সামরিক সহযোগিতার পাশাপাশি পারস্পরিক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, যাতে জোটটি শুধু প্রতিরক্ষাতেই নয়, সর্বক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে পারে।
বিশ্ব রাজনীতিবিদদের ধারণা, যদি এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ভবিষ্যতে বিশ্বের শক্তির মানচিত্র সম্পূর্ণ নতুনভাবে আঁকা হতে পারে। মুসলিম বিশ্বের নিজস্ব ন্যাটো গঠন পশ্চিমা জোটের প্রভাবকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে এবং বহু দেশের জন্য নতুন ভূরাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের প্রয়োজন হবে। সৌদি-পাকিস্তান জোটের এই পদক্ষেপকে অনেকে ২১শ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।
একটি সম্ভাব্য মুসলিম সামরিক জোটের ধারণা একসময় শুধুই কল্পনা ছিল, কিন্তু এখন তা বাস্তবতার পথে হাঁটছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তি এবং সৌদির অর্থনৈতিক প্রভাব একত্রিত হয়ে যদি মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, তাহলে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা কাঠামো নতুন রূপ নিতে বাধ্য। এমন একটি জোট গঠিত হলে, তা শুধু মুসলিম বিশ্বের শক্তির প্রতীকই হবে না, বরং বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন এক শক্তিধর কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হবে।