সংস্কার নয়, সৎকার!”—সরকারি সিদ্ধান্তে অচল হয়ে পড়লো এনবিআর, কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সরকারের হঠাৎ সিদ্ধান্তে বিলুপ্ত হলো এনবিআর—এই ঘোষণা ঘিরে রাজস্ব ভবনে চলছে টানা কর্মবিরতি। প্ল্যাকার্ডে জ্বলছে ক্ষোভ: “চেয়েছিলাম সংস্কার, পেয়ে গেলাম সৎকার!”—স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের শুল্ক, কর ও ভ্যাট কার..

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনে আজ সকাল থেকে রাজস্ব কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান। “চেয়েছিলাম সংস্কার, করে দিলো সৎকার”—এই বার্তা লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী অবস্থান নিয়েছেন এনবিআর ভবনের নিচতলায়।

রোববার, ২৫ মে, সকাল ৯টা থেকেই এনবিআরের কার্যক্রম প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ভবনের প্রধান দুটি ফটকে তালা লাগানো হয়েছে, যার ফলে ভবনে প্রবেশ কিংবা বাহির হওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। দেখা গেছে, নিচতলায় প্রধান ফটকের পাশে বসে রয়েছেন শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। কেউ কেউ প্রতিবাদী স্লোগানসহ পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড হাতে বসে আছেন; তাতে লেখা—“NBR বিলুপ্ত নয়, টেকসই সমাধান চাই”, “আমাদের দাবি, সুষ্ঠু সংস্কার”।

সকালের পর থেকে ভবনের বৈদ্যুতিক সিঁড়িগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে একটি সিঁড়ি সীমিতভাবে খোলা হলেও অন্যান্য বৈদ্যুতিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ভবনের প্রবেশপথে আনসার সদস্যদের উপস্থিতি থাকলেও নিরাপত্তা পরিবেশ ছিলো উত্তপ্ত ও উদ্বেগজনক।

হঠাৎ সিদ্ধান্তে ফুঁসে উঠেছে কর্মকর্তারা

১২ মে, সরকারের এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করা হবে—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এই ঘোষণার পর থেকেই এনবিআর জুড়ে বইতে শুরু করে বিক্ষোভের ঢেউ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, তাদের মতামত না নিয়েই হঠাৎ করেই প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলার এই সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক প্রশাসনিক চর্চার পরিপন্থী।

“আমরা সংস্কারের কথা বলেছিলাম, কিন্তু সরকার আমাদের অস্তিত্বই মুছে দিলো”—এমন হতাশাজনক মন্তব্য করছেন এনবিআরের এক সহকারী কমিশনার। তিনি আরও বলেন, “রাজস্ব প্রশাসনে সুশাসনের জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরেই নিরপেক্ষ সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। অথচ তার বদলে পুরো বোর্ড বিলুপ্ত করে ফেলা হলো।”

আন্দোলনের নেতৃত্বে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’

এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম, যারা এনবিআর-এর মধ্যে থেকেই সংস্কার ও সুশাসনের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। তারা জানিয়েছেন, এই কর্মসূচি একদিনের নয়—প্রয়োজনে দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনেও যাবে তারা।

আজ দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এনবিআর চেয়ারম্যান নিজ দপ্তরে উপস্থিত হননি। তবে ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য অবস্থান নিতে দেখা গেছে, যার মধ্যে নারী পুলিশ সদস্যের সংখ্যাও ছিলো চোখে পড়ার মতো।

কর্মবিরতির আওতা ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি

শনিবার (২৪ মে) রাতে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এনবিআরের আওতাধীন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। তবে দেশের রপ্তানি কার্যক্রম সচল রাখতেই আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কাস্টমস হাউস এবং শুল্কস্টেশনগুলো এই কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে।

আগামীকাল সোমবারও একই ধরনের কর্মসূচি চলবে। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ভবিষ্যতে আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবেন।

 

সরকারের এই হঠাৎ গৃহীত সিদ্ধান্তের কারণে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুধু কর আদায়ের প্রতিষ্ঠান নয়, এটি দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রশাসনিক কাঠামোর অংশ ছিলো—যা এখন এক ধাক্কায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হতাশা ও সম্ভাব্য স্থবিরতাও দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত এনবিআরের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সরকারি দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকার এখনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত দেয়নি।

Keine Kommentare gefunden