জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছরই হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছে বিএনপি। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর দলটির দেওয়া মতামত থেকে এ তথ্য জানা গেছে। দলের মতে, সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার বিধান গ্রহণযোগ্য নয়। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি রাজনৈতিক দলের প্রধান হতে পারবেন না—এমন বিধানেও দলটি একমত নয়।
সংবিধান সংস্কারের সুপারিশে আইনসভার নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছিল, তবে বিএনপি এতে দ্বিমত পোষণ করেছে। দলটির মতে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধানই যথেষ্ট। তবে সংসদের দুজন ডেপুটি স্পিকারের মধ্যে একজন বিরোধী দল থেকে মনোনীত করার সুপারিশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি, উচ্চকক্ষের একমাত্র ডেপুটি স্পিকার সরকারি দলের বাইরে থেকে নির্বাচিত হওয়া উচিত বলে মনে করছে দলটি।
বিএনপি আরও বলেছে, সংবিধানের সব সংশোধনী গণভোটে উপস্থাপন করা বাস্তবসম্মত নয়। এ ক্ষেত্রে সংশোধনী প্রক্রিয়াকে পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়াই যথেষ্ট হবে।
সংবিধানের রাষ্ট্রপতি অংশে সুপারিশ করা হয়েছিল, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ চার বছর করা হবে এবং তিনি সর্বোচ্চ দুইবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। কিন্তু বিএনপি বলেছে, রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পাঁচ বছর হওয়াই সমীচীন। পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসংক্রান্ত বিধানেও পরিবর্তনের প্রস্তাবে দলটি দ্বিমত পোষণ করেছে।
বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে বিএনপি বলেছে, দেশের সব বিভাগে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী আসন প্রবর্তনের সুপারিশ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে ঢাকার বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন করা যেতে পারে।
সংবিধানের মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত সুপারিশের ক্ষেত্রেও বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। বিশেষ করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জামিনে মুক্তির অধিকার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছে দলটি।
সার্বিকভাবে, সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে বিএনপির সুপারিশগুলো বিদ্যমান কাঠামোর মধ্যে থেকেই পরিবর্তন আনতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। দলটির মতে, সাংবিধানিক কাঠামোর স্থিতিশীলতাই দেশের গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।