close
ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সুপারিশ, এমপিদের ‘ফ্লোর ক্রসিং’ নিশ্চিত করার উদ্যোগ


সংবিধান সংস্কারের পথে বাংলাদেশ, পরিবর্তন আসছে রাজনীতির শাসনব্যবস্থায়
ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের সীমাবদ্ধতা দূর করতে এবার বড় পরিবর্তনের সুপারিশ আনছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। বিতর্কিত ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ‘ফ্লোর ক্রসিং’ বা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করেছে এই কমিশন।
সংসদে সরকারের একক আধিপত্য এবং বিরোধী দলের দুর্বল অবস্থার কারণে গত তিনটি সংসদে বিভিন্ন বিতর্কিত আইন পাস হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এবং বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট নিশ্চিত করতে কুইক রেন্টাল ব্যবস্থা। এসব আইন পাসের সময় বিরোধী দল কার্যত অসহায় ভূমিকা পালন করেছে।
কমিশনের মতে, ৭০ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের দলের প্রতি অতি-কঠোর আনুগত্যে বাধ্য করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। এই ধারা বাতিল হলে সংসদ সদস্যরা দলের বাইরে গিয়ে নিজের বিবেক ও জনগণের স্বার্থে ভোট দিতে পারবেন। এতে তাদের সংসদ সদস্য পদও থাকবে অক্ষুণ্ণ।
সুপারিশমালার প্রধান দিকগুলো
সংবিধান সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ১২১টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছে এবং রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়েছে। কমিশনের সুপারিশমালায় রয়েছে:
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন: এককেন্দ্রীকরণ ঠেকাতে সংসদে দুই কক্ষের ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা: একজন ব্যক্তি যেন দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন।
বয়সসীমা পরিবর্তন: তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সংসদ সদস্য হওয়ার বয়সসীমা ২৫ থেকে ২১ বছরে নামানোর প্রস্তাব।
নারীদের জন্য আসন: বর্তমান ৫০ সংরক্ষিত আসনের পরিবর্তে নারীদের জন্য ১০০টি আসন এবং সেগুলোতে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মাধ্যমে আইনের শাসন নিশ্চিত করার পরিকল্পনা।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি: ভারসাম্য আনতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ।
কীভাবে হবে পরিবর্তন?
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করবে। কমিশন প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, “ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ বন্ধ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল, দুই মেয়াদের প্রধানমন্ত্রীত্ব সীমিত করা এবং সংসদে ভারসাম্য আনাই এই সংস্কারের মূল বিষয়।”
বিশ্লেষকদের মতামত
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিবর্তনগুলো সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে এবং গণতন্ত্রকে আরও কার্যকর করবে। তরুণ নেতৃত্বকে উত্সাহিত করার পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
এই সুপারিশগুলো কার্যকর হলে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এবার দেখার বিষয়, রাজনৈতিক দলগুলো এই সুপারিশের বিষয়ে কতটা একমত হতে পারে।
Nenhum comentário encontrado