close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

সংবিধানে ‘লিঙ্গ’ শব্দের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে উদ্বেগ, স'ম'কা'মি'তাকে বৈধতা দেওয়ার আশঙ্কা ১৮০ শিক্ষকের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে ‘নারী-পুরুষ’ শব্দের পরিবর্তে অস্পষ্ট ‘লিঙ্গ’ ব্যবহারে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের ১৮০ জন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। তাঁদের আশঙ্কা, এই ধারা সংশোধনের মাধ্যমে প..

সংবিধান সংস্কারের চলমান প্রক্রিয়ায় কিছু শব্দ ও ধারা পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ, সংবিধানের ২৮ ও ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘নারী-পুরুষ’ শব্দজোড়ার পরিবর্তে অস্পষ্ট ‘লিঙ্গ’ (Gender) শব্দের প্রস্তাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ১৮০ জন খ্যাতিমান শিক্ষক। তাঁদের মতে, এই শব্দচয়ন সামাজিক ও ধর্মীয় কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

শনিবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে এই শিক্ষকরা বলেন, “আমরা সংবিধান, আইন ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৮ ও ২৯ ধারায় বৈষম্যের কারণ হিসেবে ‘নারীপুরুষভেদ’ বাদ দিয়ে অস্পষ্ট ‘লিঙ্গ’ শব্দ সংযোজন করা হয়েছে। এই পরিবর্তন ‘লিঙ্গ পরিচয়’ বা ‘জেন্ডার আইডেন্টিটি’ ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি করে, যা সমকামিতা ও এলজিবিটিকিউ+ অধিকারকে সংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পথ খুলে দিতে পারে।”

শিক্ষকদের মতে, শুধু সংবিধান নয়—জনপ্রশাসন, পুলিশ, গণমাধ্যম ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্টেও একই ধরণের পরিবর্তনের ছাপ রয়েছে।
তারা বলেন, “জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ডাইভার্সিটি ও ইনক্ল্যুশন শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের নামে এলজিবিটিকিউ অন্তর্ভুক্তিকরণকে উৎসাহ দিয়েছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন ‘নারী-পুরুষ’ শব্দ বাদ দিয়ে ‘সব জেন্ডার’ অংশগ্রহণের কথা বলেছে। পুলিশ সংস্কার কমিশনও ‘নারী ও শিশুবান্ধব পুলিশিং’-এর পরিবর্তে ‘জেন্ডার ও শিশুবান্ধব পুলিশিং’ শব্দ প্রস্তাব করেছে।”

এই প্রবণতা যে শুধু সাংবিধানিক নয়, বরং সমাজিক ও ধর্মীয় কাঠামোর জন্য হুমকি—তা স্পষ্ট করে তুলে ধরেন শিক্ষকরা। তাঁরা বলেন, “নারী বিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদনে ২৮ ও ২৯ ধারা থেকে ‘নারী-পুরুষ’ বাদ দিয়ে ‘লিঙ্গ’ শব্দ ব্যবহারের সুপারিশ স্পষ্টতই ধর্মীয় অনুশাসনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইসলামসহ দেশের প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসে সমকামিতা ও অপ্রাকৃতিক যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ।”

তাঁরা আরও উল্লেখ করেন, “বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা এখনও কার্যকর রয়েছে, যা অপ্রাকৃতিক যৌন সম্পর্ককে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে। সংবিধানের সংশোধনী যদি এই ধারার সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তবে তা দেশের প্রচলিত আইন ও নৈতিক কাঠামোর মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করবে।”

শিক্ষকদের মতে, এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবারভিত্তিক সমাজব্যবস্থার উপর সরাসরি আঘাত হানার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাঁরা বলেন, “সমাজকে বিভ্রান্ত করে এবং ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে উপেক্ষা করে কোনো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়ার নাম উন্নয়ন হতে পারে না। নারী অধিকার বা মানবাধিকার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা অবশ্যই আমাদের সমাজ কাঠামো ও মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হতে হবে।”

বিবৃতিতে স্বাক্ষরদানকারী ১৮০ জন শিক্ষকের মধ্যে আছেন ৪৪ জন অধ্যাপক, ৩১ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৬২ জন সহকারী অধ্যাপক এবং ৪৩ জন প্রভাষক।
বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৬ জন, বুয়েটের ৭ জন, বুটেক্সের ১৩ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন, সাস্টের ১২ জন, আইইউবির ৯ জন, কুয়েটের ৫ জন এবং দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মোট ৩৩ জন শিক্ষক এই বিবৃতিতে যুক্ত হয়েছেন।

শিক্ষকদের এই বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও শিক্ষাব্যবস্থার অভ্যন্তরে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ‘লিঙ্গ’ শব্দটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও বাংলাদেশের ধর্মীয় ও সামাজিক বাস্তবতায় এর প্রয়োগ ভিন্ন মাত্রার জটিলতা তৈরি করতে পারে।

তাঁরা শেষপর্যন্ত এই বলে আহ্বান জানান, “দেশীয় মূল্যবোধ, আইন ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংবিধান ও অন্যান্য সংস্কারের পদক্ষেপ নিতে হবে, নয়তো এটি আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়াবে।”

Không có bình luận nào được tìm thấy


News Card Generator