সংবিধান সংশোধন হবে গণভোটে: ক্ষমতার অপব্যবহার ঠেকাতে জনগণের মতামত নেয়া হবে জরুরি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের সংবিধানে বারবার সংশোধন এনে ক্ষমতার আধিপত্যে চরম পরিবর্তন আনা হয়েছে ক্ষমতাসীনদের হাতে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানে বারবার কাটাছেঁড়া করা হলেও,
বাংলাদেশের সংবিধানে বারবার সংশোধন এনে ক্ষমতার আধিপত্যে চরম পরিবর্তন আনা হয়েছে ক্ষমতাসীনদের হাতে। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংবিধানে বারবার কাটাছেঁড়া করা হলেও, জনগণের মতামত কখনই মূল্য পায়নি। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে সংবিধানে সংশোধন আনতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি তুলে দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত করে তোলা হয়েছে, যা জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করেছে। এই অবস্থার পরিবর্তন আনার জন্য এবং জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে আগামীতে সংবিধান সংশোধন করতে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো সংবিধান সংশোধন হলে তা উভয়কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অনুমোদন নিয়ে গণভোটে উপস্থাপন করা হবে, এবং গণভোটের ফলাফল সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। গত শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে সংবিধান সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, যা দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি সরকার আরও পাঁচটি কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। এর আগে ১৫ জানুয়ারি, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের জন্য ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এ মাসের মধ্যভাগে এটি অনুষ্ঠিত হতে পারে। অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বে গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিশন কর্তৃক চূড়ান্ত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সংবিধান সংশোধন করতে হলে উভয়কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন হবে। এছাড়া, এই সংশোধনীর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত নেওয়া হবে। কমিশন আরও সুপারিশ করেছে যে, দেশের আইনসভা দ্ব chambersত্মক (bicameral) হওয়া উচিত, যেখানে একটি উচ্চকক্ষ (সিনেট) এবং একটি নিম্নকক্ষ (জাতীয় সংসদ) থাকবে। জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা ৪০০ হবে, যেখানে ১০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে এবং বাকি ৩০০ আসন বিদ্যমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। অন্যদিকে, সিনেটে ১০৫ সদস্য থাকবে, যাদের মধ্যে ১০০ জন রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নির্বাচিত হবেন। এছাড়া, কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে যে, একজন ব্যক্তি জীবনে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং সংসদ নেতা হতে পারবেন না, এবং নির্বাচন প্রার্থীদের বয়স ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ বছর করা হবে। এখন প্রশ্ন উঠছে, কেন গণভোট প্রয়োজন? কমিশনের মতে, অতীতে সংবিধানে একাধিকবার পরিবর্তন আনা হলেও, জনগণের মতামত কখনই গুরুত্ব পায়নি। এই সমস্যা সমাধানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ঠেকাতে গণভোটের প্রস্তাব করা হয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান, অধ্যাপক আলী রিয়াজ, গণভোটের বিষয়ে কথা বলেন, “আমরা গণভোটের পক্ষে। অতীতে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে শাসকরা নিজেদের ইচ্ছামতো সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে। ভবিষ্যতে আমরা সেটা আর দেখতে চাই না।” এভাবে, সংবিধানে এই পরিবর্তনগুলির মাধ্যমে এক নতুন যুগে প্রবেশের প্রস্তুতি চলছে, যেখানে জনগণের মতামতকে সম্মান করা হবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে তাদের অনুমোদন নেওয়া হবে।
没有找到评论


News Card Generator