close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

সিটি নির্বাচন: দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করে অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
The Advisory Council has approved a draft ordinance to scrap political party symbols in city corporation elections, marking a significant shift toward non-partisan local governance.

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার আর থাকছে না। নতুন অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। শুরু হলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের নতুন অধ্যায়।

সিটি নির্বাচনে ঐতিহাসিক পরিবর্তন: দলীয় প্রতীক থাকছে না, চূড়ান্ত অনুমোদন দিল উপদেষ্টা পরিষদ

বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতীক ব্যবহারের বিধান বাতিল করে নতুন একটি অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে এই খসড়াটি বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন পায়।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং শেষে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়াকে চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।" এই অধ্যাদেশ বলবৎ হলে, দেশের সব সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীক ব্যবহার আর বৈধ থাকবে না।

অর্থাৎ, নির্বাচন হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিযোগিতায়, যেখানে ভোটাররা ব্যক্তি পরিচিতি ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ পাবেন। দলীয় প্রভাব, কেন্দ্রীয় রাজনীতির দখলদারিত্ব এবং স্থানীয় সমস্যাগুলোর গুরুত্বহীনতা দূর করার লক্ষ্যে এটি একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির প্রভাব দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রার্থীরা স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার পরিবর্তে দলীয় উচ্চাভিলাষ বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়ে পড়ছেন। এতে করে নাগরিক সুবিধা ব্যাহত হচ্ছে এবং রাজনৈতিক সংঘাতও বাড়ছে।

অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকে বলেন, “স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হলে সেটিকে জাতীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করা জরুরি। ব্যক্তি কেন্দ্রিক নেতৃত্ব, যোগ্যতা, সেবার মনোভাব ও স্বচ্ছতা দিয়েই স্থানীয় সরকার কাঠামোকে নতুন রূপ দিতে হবে।

এই সিদ্ধান্তের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। কিছু রাজনৈতিক দল একে ‘জনবিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করলেও, বিশ্লেষকরা বলছেন এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সত্যিকার পরিবর্তন আনবে।

এই উদ্যোগ দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। প্রতীক ছাড়া নির্বাচনে দলীয় হস্তক্ষেপ কমবে, তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য নিরপেক্ষ প্রশাসনিক সহায়তা অপরিহার্য।

এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকেই প্রার্থীরা আর দলীয় প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। পরিবর্তে তারা নিজেদের পছন্দমতো প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন অথবা নির্ধারিত প্রতীক বরাদ্দ পেতে পারবেন নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা, জনসম্পৃক্ততা ও নির্বাচনী প্রচারণার পদ্ধতিতেই পরিবর্তন আসবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচলিত প্রচারণা কৌশল থেকেও এই নির্বাচন আলাদা হবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় এটি এক ঐতিহাসিক মোড় পরিবর্তন। দলীয় প্রতীক ছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার সিদ্ধান্ত দেশের স্থানীয় সরকার কাঠামোকে আরো স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারে। তবে এর সঠিক বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সব মহলের আন্তরিকতা এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা।

Aucun commentaire trouvé