সিরিয়ার কুনেইত্রা প্রদেশে ইসরায়েলি বাহিনীর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল হাজার হাজার বর্গমিটার কৃষিজমি। জাতিসংঘের সহায়তা থাকলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয়রা।
সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুনেইত্রা প্রদেশে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী—এমনই অভিযোগ উঠেছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আল-ইখবারিয়া সিরিয়ার বরাতে। গোলান মালভূমির সীমান্তবর্তী আল-রাফিদ শহরের কাছে শুক্রবার এই ঘটনাটি ঘটে, যার জেরে বিশাল কৃষিজমি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা সীমান্ত বেড়ার কাছাকাছি, বিশেষ করে আল-রাফিদের পশ্চিমাংশে একাধিক জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে অনেক ডুনাম জমি পুড়ে গেছে (১ ডুনাম = ১,০০০ বর্গমিটার)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লেগে থাকা অবস্থাতেই পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ঢেকে যায় এবং কৃষকেরা প্রাণভয়ে ঘরছাড়া হন।
আল-ইখবারিয়া জানায়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী আগুন নেভাতে জরুরি সরঞ্জাম ব্যবহার করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাবে আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আগুন ছড়িয়ে পড়ার গতি এতটাই বেশি ছিল যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কয়েক হাজার বর্গমিটার জমি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
অবশ্য স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তারা এই আগুন লাগার ঘটনার দায় স্বীকার করেনি বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেই কুনেইত্রার ডেপুটি গভর্নর মুহাম্মদ আল-সাঈদ এক বিস্ফোরক তথ্য দেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের সরকার পতনের পর ইসরায়েল এই অঞ্চলে অন্তত ৮টি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। এসব ঘাঁটি কুনেইত্রার উত্তরের ইয়ারমুক অববাহিকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে, যা সরাসরি ১৯৭৪ সালের ডিসেংগেজমেন্ট চুক্তির লঙ্ঘন বলে তিনি দাবি করেন।
ডেপুটি গভর্নর বলেন, এই সামরিক ঘাঁটিগুলোর কারণে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর বা ১৪,৮০০ একর জমি এখন কৃষিকাজ ও পশু চরানোর জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। বহু পরিবার তাদের গবাদিপশুর খাবার এবং অর্থনৈতিক জীবিকা হারিয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের মতে, এই জমিগুলোর বেশিরভাগই ফলমূল, শাকসবজি এবং পশু খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হতো। আগুন লাগানোর এই ঘটনার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল এই এলাকার কৃষি ও অর্থনীতিকে ধ্বংস করা।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সিরিয়ার গোলান মালভূমির অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নেয়। ১৯৮১ সালে তারা একতরফাভাবে এই অঞ্চল নিজেদের ভূখণ্ড ঘোষণা করে, যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রায় কেউই এ পদক্ষেপকে স্বীকৃতি দেয়নি।
আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আহমাদ আল-শারার নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা আনুষ্ঠানিকভাবে বাথ পার্টির দীর্ঘ ৫০ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। এই রাজনৈতিক রদবদলের সুযোগ নিয়ে ইসরায়েল তাদের সামরিক উপস্থিতি ও আগ্রাসন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক নীরবতা ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়েই ইসরায়েল সিরিয়ায় আগ্রাসন চালাচ্ছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও বিবৃতি আসেনি।
এই আগুনের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও নির্ধারিত হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, শত শত কৃষক পরিবার এই ঘটনার কারণে চরম সংকটে পড়েছে।