সিরিয়া-লেবাননের সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে ‘আগ্রহী’ ইসরায়েল

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দশকের দ্বন্দ্বের পর ইসরায়েল সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে আগ্রহী, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার নতুন পথের প্রত্যাশায় আন্তর্জাতিক নজর।..

দশকব্যাপী যুদ্ধ ও বৈরিতাপূর্ণ সম্পর্কের পর, ইসরায়েল সোমবার ঘোষণা করেছে যে তারা প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতে আগ্রহী। মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মাঝে এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার বলেন, সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের সরকার দুর্বল হওয়ায় এবং লেবানে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর কার্যক্রম কমে আসায় ইসরায়েল এই সময় শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ হিসেবে দেখে। তিনি জানান, তারা মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে আগ্রহী এবং এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তির মতো আরও শান্তি চুক্তি সম্প্রসারণের ইচ্ছা রয়েছে।

জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের অপরিহার্য নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করা হবে বলেও জোর দিয়ে জানান গিদিওন সার। তিনি উল্লেখ করেন, গোলান মালভূমির নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের অংশ হিসেবে থেকে যাবে, যা সিরিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু।

গোলান মালভূমি ১৯৬৭ সালে ইসরায়েলের দখলে নেয়া হয়। গত ডিসেম্বরে আসাদের পতনের পর এই এলাকায় ইসরায়েল তাদের সেনা মোতায়েন ও সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে। একই সময়ে, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে লেবাননে হিজবুল্লাহর প্রভাব কমেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

তবে ইসরায়েলের এই শান্তিচুক্তির আগ্রহের বিষয়ে সিরিয়া ও লেবাননের কোনও সরকারিভাবে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মোড় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গাজা উপত্যকায় হামলা বন্ধের জন্য ইসরায়েল সরকারের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য নতুন আলোচনা শুরু হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে।

টম ব্যারাক, তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত, বলেন, “ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত আমাদের জন্য একটি সংকেত যে সময় এসেছে একটি নতুন যাত্রা শুরু করার।” তিনি আরও বলেন, “মধ্যপ্রাচ্য নতুন আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কারণ মানুষ একই পুরনো যুদ্ধের ক্লান্ত।”

এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের অস্থিরতার মধ্যে সম্ভাবনার সঞ্চার করেছে। ইসরায়েল, সিরিয়া ও লেবাননের মধ্যে শান্তিচুক্তি হলে এটি গোটা অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো এই শান্তিচুক্তির সম্ভাবনাকে উৎসাহিত করছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথ খুলে দিতে পারে।

তবে শান্তিচুক্তির সফল বাস্তবায়নের জন্য অনেক বাধা ও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, বিশেষ করে নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের টানাপোড়েনের কারণে। এই পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সংলাপ ও আস্থা গঠনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আনা কতটা সম্ভব হবে, তা সময়ের সাথে স্পষ্ট হবে।

এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের সকল পক্ষেরই দায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে, যাতে সংঘর্ষের অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়।

Walang nakitang komento


News Card Generator