সীমান্তে বিএসএফের গুলির পর ড্রোন উড়ানোর ঘটনা, উত্তেজনা বাড়ল কুড়িগ্রামের রৌমারীতে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে ভারতের বিএসএফ সদস্যদের গুলির ঘটনায় উত্তেজনা বাড়ছে। গুলির পর বিএসএফ ড্রোন উড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে, যা সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা ও আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা ও বিজি..

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় সীমান্তবর্তী এলাকা গত মঙ্গলবার সকালে এক অস্বাভাবিক ও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক চার রাউন্ড গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, গুলির পর বিএসএফ সদস্যরা ড্রোনও উড়িয়েছে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজিবি বড়াইবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার আঞ্জু মিয়া জানান, মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে রৌমারীর বড়াইবাড়ী সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ একটি ড্রোন উড়াতে দেখা গেছে। এটি সীমান্ত এলাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অতিরিক্ত সতর্কতা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় ভোরে, যখন ভারতের আসাম রাজ্যের মানকারচর থানার কাকরিপাড়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা রৌমারী সদর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ী সীমান্তে ১৪ জন নারী-পুরুষকে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় জোরপূর্বক পুশইন করেন। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা এবং বিজিবি সদস্যরা দ্রুত সীমান্তে অবস্থান নেন।

বড়াইবাড়ী কোম্পানি কমান্ডার আঞ্জু মিয়া বলেন, পুশইনকৃত ভারতীয় নাগরিকদের বিজিবি তাদের নিয়ে সীমান্তের শূন্যরেখায় ফিরে গেলে, বিএসএফ সদস্যরা অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করে এবং ৪ রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে। পরে বিজিবি সদস্যরা শান্তি বজায় রাখতে শূন্যরেখায় অবস্থান নেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গুলির শব্দ শুনে বড়াইবাড়ীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ দ্রুত সীমান্ত এলাকায় ছুটে যান এবং বিজিবির পাশে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নজরদারি শুরু করেন। তাদের মতে, এই ধরনের ঘটনা সীমান্তবর্তী এলাকায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ইঙ্গিত বহন করে।

সীমান্ত এলাকায় গত কয়েক মাসে এ ধরনের উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা কম ছিল না। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে নিয়মিত বাগ্বিতণ্ডা, গুলির ঘটনা এবং পুশইনের বিষয়গুলো প্রায় সময় আলোচনায় আসে। তবে ড্রোন উড়ানোর ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা সীমান্ত নিরাপত্তা ও মানুষের নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।

বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও, স্থানীয়রা সীমান্ত এলাকায় অতিরিক্ত সতর্কতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি তুলেছেন। স্থানীয় এক নেতা বলেন, “সীমান্ত এলাকা আমাদের জীবনের অঙ্গ, এখানকার মানুষ শান্তি চায়, কিন্তু প্রতিবেশী দেশের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ড আমাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে।”

বিজিবি কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দুই দেশের সীমান্ত কমান্ডারদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্তে পর্যাপ্ত টহল বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। তবে রাজনৈতিক পর্যায়েও এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সীমান্তে বিএসএফের এই গুলির ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হতে পারে। এ ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সীমান্তবর্তী জনজীবনকে অস্থির করে তোলে এবং দীর্ঘমেয়াদে দুই দেশের মধ্যকার পারস্পরিক বিশ্বাস ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

এই ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে বিজিবি ও স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে সহায়তা করছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে তার জন্য দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

সীমান্ত এলাকায় ড্রোন উড়ানোর বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। বিজিবি কর্তৃপক্ষ আশা করছে, দুই দেশের সীমান্ত কমান্ডারদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি পেলে ভবিষ্যতে এ ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হবে।

Geen reacties gevonden