close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

সিলেটে ‘প্রতিবাদ’ এর আড়ালে ৫০ কোটি টাকার ধ্বংসযজ্ঞ! এক রাতেই লুটপাট ও ভাঙচুরে কেঁপে উঠল শতাধিক প্রতিষ্ঠান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে সিলেটে সংঘটিত হলো নজিরবিহীন সহিংসতা। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বাটা, কেএফসি-সহ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চালানো হয় লুটপাট ও ভাঙচুর। ক্ষতি অন্তত ৫০ কোটি টাকা। আতঙ্কে অনেকেই ..

সিলেটে ইতিহাসের ভয়াবহ লুটপাট ও সহিংসতা: ক্ষতি প্রায় ৫০ কোটি টাকা!

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে উত্তাল বাংলাদেশের রাজপথ। তবে সেই ন্যায্য প্রতিবাদের আড়ালে সোমবার সিলেট নগরীতে দেখা গেছে এক ভয়ঙ্কর রূপ—যেখানে ‘প্রতিবাদ’ পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসে।

সিলেট শহরের জিন্দাবাজার, দরগা গেট, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, লন্ডন ম্যানশনসহ বিভিন্ন এলাকায় সোমবার রাতে হামলা চালানো হয় অন্তত শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। আন্তর্জাতিক ফুড চেইন কেএফসি, জনপ্রিয় জুতার ব্র্যান্ড বাটা, পিৎজা হাট, হোটেল সফুরা, রয়েল মার্ক, বনফুল, ফুলকলি—কোনোটিই বাদ যায়নি। রেস্তোরাঁ, শোরুম থেকে শুরু করে ছোট মুদি দোকান, পান-সিগারেটের টং দোকান পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। শুধু বাটার ৮টি শোরুমেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রাথমিক হিসাব মতে, ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা

পরিস্থিতির ভয়াবহতা এতটাই যে, মঙ্গলবারও অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীরা এখনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে সশস্ত্র পুলিশ সদস্য। প্লাস্টিকের ত্রিপল দিয়ে ঘেরা হচ্ছে ভাঙা শাটার, মেরামতের কাজ চলছে অনেক জায়গায়।

হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাদেরকে আদালতে সোপর্দও করা হয়েছে। তবে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বলছেন—এটা পরিকল্পিত হামলা, কেবল প্রতিবাদ নয়।

হোটেল রয়েল মার্ক ও সফুরা রেস্টুরেন্টের মালিক এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মুসলমান, আমরা ফিলিস্তিনের পাশে আছি। কিন্তু আমার হোটেলে যেভাবে হামলা হয়েছে, তা কোনো প্রতিবাদ নয়, এটা পরিকল্পিত তাণ্ডব।’ তিনি জানান, শুধু তার হোটেলেই ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দেখেন এবং বলেন, ‘গাজার জন্য প্রতিবাদ ঠিক আছে, কিন্তু সিলেটের ব্যবসায়ীদের ধ্বংস করে দিয়ে তা করা যায় না। এতে দেশের অর্থনীতিরই ক্ষতি হলো।’

অন্যদিকে, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের আহ্বায়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘শিশুদের লাশের মিছিল দেখে বিশ্ব কাঁদছে, সেখানে কিছু লোক লুট করে "ঈদ মোবারক" বলছে—এটা মানবতা নয়, এটা দানবতা।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয় দোষীদের। যারা ঘটনাটিকে ধর্ম বা রাজনীতির মোড়কে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছে, তারা দেশের ক্ষতি করছে।’

আলপাইন রেস্টুরেন্টের মালিক এবং জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা জাকির হোসেন বলেন, ‘এটা গাজার পাশে দাঁড়ানোর নাম নয়, এটা ছিল শোকের সুযোগে ব্যবসা ধ্বংসের ছক।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী একে সরাসরি চুরি ও লুটপাট বলে আখ্যা দেন। তার মতে, ‘প্রতিবাদে কোনো সহিংসতা থাকা উচিত নয়। যারা লুটপাট করেছে, তারা রাজনৈতিক নয়, তারা অপরাধী।’

সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম জানান, ‘ঘটনায় জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। প্রশাসন সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দোষীদের শনাক্ত করছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই ঘটনার পর সিলেটের ব্যবসায়ী মহলে যেমন আতঙ্ক, তেমনি জনগণের মনেও উঠেছে প্রশ্ন—সত্যিকারের প্রতিবাদ কি এমন হয়? ধর্মের নামে কি অরাজকতা জায়েজ হয়?

সিলেট শহর, যা পরিচিত ছিল সম্প্রীতির শহর হিসেবে—সে শহরে এমন সহিংসতা শুধু ক্ষয়ক্ষতি নয়, সমাজ ও মানবিকতাকেও করেছে কলঙ্কিত।

No comments found


News Card Generator