বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের আলোচিত জুটি ছিলেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। বড় পর্দায় তারা উপহার দিয়েছেন একের পর এক সুপারহিট সিনেমা, যা দর্শকদের হৃদয়ে গেঁথে আছে আজও। কিন্তু পর্দার সেই রোমান্স বাস্তবে গড়িয়েছে অনেকটাই ভিন্ন পরিণতির দিকে। প্রেম, বিয়ে, সন্তান—সবই হয়েছে গোপনে, আবার একসময় সামনে এসেছে বিস্ফোরক সত্যের খণ্ডচিত্র।
২০০৮ সালে গোপনে বিয়ে করেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। বিষয়টি দীর্ঘ সময় গোপন রাখা হয়। এরপর ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল হঠাৎ করেই নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে সন্তান আব্রাম খান জয়কে নিয়ে হাজির হয়ে বিয়ের কথা প্রকাশ করেন অপু। সেই সময় তিনি দাবি করেছিলেন, বিয়ের পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি।
তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী নিজেই জানালেন, সেই দাবিটি ছিল মিথ্যা। তিনি কখনোই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি। বরং নিজের ক্যারিয়ার, পারিবারিক পরিস্থিতি এবং সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ক্যামেরার সামনে মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন।
অপু বিশ্বাস বলেন, “সত্যি কথা বলতে, বিয়ের পরও আমি আমার পুরনো ধর্ম—হিন্দু ধর্মেই ছিলাম। ক্যামেরার সামনে অনেক মিথ্যা বলতে হয়েছে। কারণ তখন আমার ক্যারিয়ার ছিল এক ধরনের চাপে, পাশাপাশি শাকিব ছিল আমার স্বামী। তাকে সাপোর্ট করাটা আমার দায়িত্ব বলে মনে করেছি।”
তিনি আরও জানান, “অনেক সময় বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে যখন আমরা একসাথে যেতাম, তখন সঞ্চালক আমাদের জিজ্ঞেস করতেন কবে বিয়ে করছি। অথচ আমরা তখন স্বামী-স্ত্রী। রাতে একসাথে বাসায় গিয়ে রান্না করে খাইয়েছি তাকে। এমনও হয়েছে, অনুষ্ঠান শেষে শুটিং স্পট থেকে ফিরে আমি শাকিবের প্রিয় খাবার রান্না করেছি। অথচ কেউ জানত না, আমরা বিবাহিত।”
অপু বিশ্বাস বলেন, সন্তানের জন্যই তিনি তখনকার পরিস্থিতিতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। “যেহেতু শাকিব মুসলিম, আর আমি তার স্ত্রী, তখন মনে হয়েছিল সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে হলে কিছু বিষয় গোপন রাখাই ভালো। আমি চাইনি আমার সন্তানের জীবন শুরু হোক অস্থিরতা দিয়ে। সেজন্যই নিজের ধর্ম, বিয়ে, সবকিছু নিয়ে চুপ ছিলাম। কিন্তু যখন জয়কে নিয়ে সামনে এলাম, তখন সবাই জেনে গেল আমি বিবাহিত। তখনও অনেকে ভেবেছে, আমি মুসলিম হয়েছি।”
তবে তিনি পরিষ্কার করে বলেন, “আমি হিন্দু ছিলাম, হিন্দুই আছি। শাকিবের পরিবার আমাকে ইসলাম ধর্মে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মান্তরিত করতে কোনো ধরনের প্রক্রিয়ায় নেয়নি। তাহলে আমি কীভাবে নিজেকে মুসলমান বলি? মানুষ ভাবতে পারে আমি ইসলাম গ্রহণ করে আবার হিন্দুতে ফিরে গেছি, অথচ বিষয়টি তেমন নয়।”
এক প্রশ্নের জবাবে অপু বলেন, “আমার ছেলের জন্যই তখন মিথ্যা বলেছি। আমি চাইনি ওর শৈশবটা জটিল হয়ে যাক। তাছাড়া সমাজের অনেক কিছু তখন বুঝে উঠতে পারিনি। কিন্তু একটা সময় মনে হলো, আমি যদি হঠাৎ মারা যাই, তখন আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, এমনকি দর্শকরা দ্বিধায় পড়ে যাবে—আমার শেষকৃত্য কীভাবে হবে? আগুনে দাহ করা হবে, নাকি কবর দেওয়া হবে?”
তিনি বলেন, “এমন বিভ্রান্তির জীবন নিয়ে তো আর চলা যায় না। একসময় সত্যি বলাটাই জরুরি হয়ে দাঁড়ায়। শাকিবের সঙ্গে এখন আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই নিজের অবস্থান পরিষ্কার করাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হয়েছে।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে অপু বিশ্বাস তার জীবনের একটি দীর্ঘ গোপন অধ্যায় প্রকাশ্যে আনলেন, যা শুধু ব্যক্তি জীবনের নয়, বরং সমাজ ও বিনোদন জগতের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। তার সাহসিকতা ও সত্য বলা অনেক নারীকে অনুপ্রাণিত করবে, যারা একই রকম দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে যান।
অপু বিশ্বাসের এই স্পষ্ট ও খোলামেলা স্বীকারোক্তি ভক্তদের যেমন চমকে দিয়েছে, তেমনি সমাজে নারীর অবস্থান, ধর্ম ও সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছে। সত্যকে মিথ্যার জালে ঢেকে রাখা যায় না—এটাই যেন এই সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে বড় বার্তা।



















