ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের হাতে কখনোই সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের অধিকার দেওয়া হবে না। গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই এই বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে আবারও উড়িয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ফিলিস্তিনিদের শাসনের অধিকার থাকতে পারে, তবে সার্বভৌম ক্ষমতা কখনোই তাদের হাতে দেওয়া হবে না। যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় সোমবার (৭ জুলাই) হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন তিনি।
বৈঠকে গাজা পরিস্থিতি, যুদ্ধবিরতি, এবং হামাসের হাতে আটক থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিষয়েও আলোচনা হয়। ঠিক সেই মুহূর্তেই নেতানিয়াহুর এমন কঠোর বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন করে আগুন জ্বালিয়েছে।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু বলেন, “ফিলিস্তিনিদের নিজেদের প্রশাসন চালানোর অধিকার থাকা উচিত। তবে যে কোনো ক্ষমতা, যা ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে, তা তাদের হাতে যাবে না। সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ থাকবে শুধু ইসরায়েলের হাতেই।
তিনি আরও বলেন, “আমরা শান্তি চাই, তবে সেই শান্তি এমন হতে হবে, যেখানে ফিলিস্তিনিরা আমাদের ধ্বংস করতে না চায়। আমাদের নিরাপত্তা বজায় রাখতে হলে সার্বভৌম ক্ষমতা একমাত্র আমাদের কাছেই থাকতে হবে।
এই বক্তব্যের মাধ্যমে নেতানিয়াহু কার্যত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করলেন। তার ভাষায়, “এখন অনেকে বলছে, এটা তো পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র নয়, এটা ওটা। কিন্তু আমরা এসব গুঞ্জনে কান দিই না। আমরা শপথ করেছি—আর কখনো নয়। মানে এই মুহূর্ত থেকে, কখনোই এমন কিছু ঘটতে দেওয়া হবে না।
নেতানিয়াহুর এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে অনেকে আশঙ্কা করছেন, এটি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন বহুদিনের। অথচ এই বক্তব্য সেই স্বপ্নে সরাসরি আঘাত হেনেছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ে নিরুৎসাহিত বলেই মনে হয়েছে। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি জানি না।” এ উত্তরে তিনি তার অবস্থান অস্পষ্ট রেখেছেন, তবে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়ানো থেকেই অনেকে বুঝতে পারছেন, ওয়াশিংটনের সমর্থনও এই মুহূর্তে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে নয়।
নেতানিয়াহুর এ বক্তব্য শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান দ্বন্দ্ব ও দমননীতির এক প্রতীক হয়ে উঠছে। ফিলিস্তিনের জনগণ যাদের অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে বহু দশক ধরে সংগ্রাম করে চলেছে, তাদের সামনে এই বক্তব্য একটি বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইসরায়েল সরকার আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপকে উপেক্ষা করে সরাসরি ঘোষণা দিল, তারা কোনোভাবেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে না।