শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা:
বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অনুষ্ঠিত হলো এক বিরল ও অনন্য সম্মিলিত দোয়া–মোনাজাত। এই দোয়া অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের একত্র উপস্থিতি সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক সম্প্রীতির এক নতুন দৃষ্টান্ত।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বাদ আসর পৌরসভার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে সাতক্ষীরা-৪ আসনের বিএনপির মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ড. মোঃ মনিরুজ্জামানের উদ্যোগে ও শ্যামনগর উপজেলা বিএনপি আয়োজনে এই সম্মিলিত দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
দোয়া অনুষ্ঠানে এক মঞ্চে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও আলেম-ওলামারাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা এক মঞ্চে উপস্থিত হয়ে দোয়ায় অংশগ্রহণ করেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে অংশ নেন।
এ সময় সাতক্ষীরা-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ড. মোঃ মনিরুজ্জামান, জামায়াত মনোনীত গাজী নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত মোস্তফা আল মামুন (হাজী মনির), জামায়তের আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, উপজেলা বিএনপির সদ্য সাবেকক আহবায়ক সোলায়মান কবির, উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এম. কামরুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলন শ্যামনগর পৌর শাখার সভাপতি হাফেজ মনিরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বিএনপির, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা দোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য আশেক এলাহী মুন্নার সঞ্চালনায় দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে জামায়াত ইসলামিয়া বাংলাদেশ মনোনীত সাতক্ষীরা-৪ আসনের মনোনীত প্রার্থী গাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমতের হলেও মানবিকতার প্রশ্নে আমরা সবাই এক। বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জাতির জন্য অনেক অবদান রয়েছে। তার সুস্থতা কামনায় এই দোয়া মাহফিলে উপস্থিত হতে পারা আমাদের জন্য গর্বের। আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন এবং আরো একবার রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেন-এই দোয়াই আমাদের সকলের।’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত এই আসনের প্রার্থী মোস্তফা আল মামুন (হাজী মনির) বলেন, ‘অসুস্থ মানুষের জন্য দোয়া করা ইসলামের শিক্ষা। আজকে রাজনৈতিক সীমারেখা পেরিয়ে আমরা এখানে এসেছি মানবিকতার টানে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি-তিনি যেন বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ আরোগ্য প্রদান করেন এবং জাতিকে ঐক্য ও শান্তির পথে পরিচালিত করেন।’
সাতক্ষীরা-৪ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ড. মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি আজ শুধু একটি দলের বিষয় নয়, এটি পুরো জাতির একটি মানবিক ইস্যু। আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এখানে উপস্থিত হয়ে যে সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি, মানবিক প্রশ্নে ঐক্যই পারে জাতিকে এগিয়ে নিতে।’
আলোচনা শেষে দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ কান্না জড়িত কণ্ঠে দুই হাত তুলে আল্লাহর নিকট বেগম খালেদা জিয়ার পরিপূর্ণ সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন শ্যামনগর উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম আলহাজ্ব মুফতি আব্দুল খালেক। এ সময় স্থানীয় ওলামা-মাশায়েখরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আগামীর ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেও এমন সম্মিলিত অংশগ্রহণ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ইতিবাচক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরা ৪ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ড. মনিরুজ্জামানের মানবিক উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তারা বলেন, রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়েও ভিন্ন মতের রাজনৈতিক নেতাদের একই মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দোয়া-মোনাজাতে অংশগ্রহণ করানো সত্যিই অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করে, ড. মনিরুজ্জামান বিভেদ নয়, ঐক্য ও মানবিকতাকে বেশি গুরুত্ব দেন। খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় তিনি যেভাবে সবাইকে একত্র করেছেন, তা শ্যামনগরের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন উদাহরণ। তার এই উদ্যোগে এলাকায় শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের কাছে তিনি আরও বেশি সম্মান অর্জন করেছেন।”
স্থানীয় প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তি হারুন অর রশিদ বলেন, রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়েও এতগুলো দলের নেতাকে একই মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দোয়া-মোনাজাতে অংশগ্রহণ করানো সত্যিই অনন্য ব্যাপার। ড. মনিরুজ্জামানের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে-তিনি বিভেদ নয়, ঐক্যকে গুরুত্ব দেন।’
শ্যামনগর সরকারি মহাসিন কলেজের এক শিক্ষক বলেন, তিনি শুধু রাজনৈতিক প্রার্থী নন, মানবিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন একজন মানুষ। খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য তিনি যেভাবে সবাইকে একত্র করেছেন, তা শ্যামনগরের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন দৃষ্টান্ত।’
স্থানীয় তরুণ মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা দেখে আসছি, রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে থাকে। কিন্তু ড. মনিরুজ্জামান যেভাবে সবাইকে একই মঞ্চে এনেছেন, তাতে বোঝা যায়-তিনি মানুষের মন বোঝেন এবং এলাকার কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চান।’
এই তরুণ আরো বলেন, ‘তিনি (মনিরুজ্জামান) সবসময়ই শান্তিপূর্ণ রাজনীতি এবং জনগণের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেন। এই দোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন-নেতৃত্ব আসলে বিভেদ নয়, একতার মাধ্যমে জনগণের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়া।’



















