ইসরায়েল ফের জাতিসংঘের কালোতালিকায়। শিশুদের ওপর ব্যাপক সহিংসতা চালানোর অভিযোগে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইসরায়েলকে ‘Child Rights Violators’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। বিশ্ব সংস্থার বার্ষিক রিপোর্ট ‘Children in Armed Conflict’-এ এই রায় এসেছে এমন এক সময়ে, যখন গাজা উপত্যকায় চলছে ইতিহাসের অন্যতম নির্মম গণহত্যা।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস ১৩ জুন বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। তাতে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী শিশুদের ওপর সহিংসতা নজিরবিহীন হারে বেড়েছে। শুধু গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরেই ঘটেছে সবচেয়ে বেশি শিশু নির্যাতনের ঘটনা, যার জন্য সরাসরি দায়ী ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গত এক বছরে ইসরায়েল ও অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ৮ হাজার ৫৫৪টি শিশু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৪৪টি ছিল ফিলিস্তিনি শিশুর বিরুদ্ধে, মাত্র ১৫টি ইসরায়েলি শিশুর বিরুদ্ধে।
সবচেয়ে মর্মান্তিক তথ্য হলো, গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ১ হাজার ২৫৯ ফিলিস্তিনি শিশু এবং আহত হয়েছে আরও ৯৪১ জন। জাতিসংঘ বলছে, এই সংখ্যাগুলোও আংশিক, কারণ আরও ৪ হাজার ৪৭০ শিশুর মৃত্যুর তথ্য যাচাই করছে সংস্থাটি।
অধিকৃত পশ্চিম তীর, বিশেষ করে পূর্ব জেরুজালেমে, ২০২৪ সালে নিহত হয়েছে ৯৭ ফিলিস্তিনি শিশু। শুধু এই এলাকায় শিশুদের বিরুদ্ধে রেকর্ড করা সহিংসতার সংখ্যা ৩ হাজার ৬৮৮।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহিংসতার মধ্যে শুধু ব্যক্তিগত হত্যাই নয়, বিস্ফোরক হামলা চালানো হয়েছে স্কুল ও হাসপাতালের মতো শিশুদের সুরক্ষিত এলাকায়ও।
গুতেরেস বলছেন, -জনবহুল এলাকায় বিস্ফোরক অস্ত্রের ব্যবহার ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। ইসরায়েল যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও শিশু সুরক্ষার নিয়মগুলোকে তাচ্ছিল্য করছে।
প্রতিবেদনে লেবাননের কথাও এসেছে। সেখানে ইসরায়েলি হামলায় গত বছর ৫০০-রও বেশি শিশু নিহত বা আহত হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের আগ্রাসন সীমান্ত পেরিয়ে শিশুদের জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে।
তবে শুধু ইসরায়েল নয়, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখাকেও (আল-কাসেম ব্রিগেড ও আল-কুদস ব্রিগেড) জাতিসংঘ একই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিপরীতে এই গোষ্ঠীগুলোর প্রতিক্রিয়া কখনোই একমাত্রিকভাবে তুলনা করা যায় না।
গাজা ছাড়াও ২০২৪ সালে যেসব দেশে শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে, তা হলো:
-
কঙ্গো প্রজাতন্ত্র: প্রায় ৪,০০০ শিশু নির্যাতনের শিকার
-
সোমালিয়া: প্রায় ২,৫০০ শিশু
-
নাইজেরিয়া: প্রায় ২,৫০০ শিশু
-
হাইতি: প্রায় ২,২০০ শিশু
শতকরা হারে সহিংসতা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি:
-
লেবানন: ৫৪৫%
-
মোজাম্বিক: ৫২৫%
-
হাইতি: ৪৯০%
-
ইথিওপিয়া: ২৩৫%
-
ইউক্রেন: ১০৫%
এই রিপোর্ট নিয়ে এখনো ইসরায়েলের জাতিসংঘ মিশন কোনো মন্তব্য করেনি। আন্তর্জাতিক মহল যদিও এই নীরবতাকে অপরাধ স্বীকারের সমান মনে করছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের কণ্ঠে শেষ আহ্বান—বেসামরিক জনগণ, বিশেষ করে শিশুদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করুন। স্কুল ও হাসপাতালের মতো স্থাপনা ধ্বংস করে আপনি মানবিকতার সব সীমানা লঙ্ঘন করছেন।