মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় শহিদ শিক্ষক মেহেরীনকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়নি। 'কফিন মার্চ' থেকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান প্রশ্ন তুলেছেন— “তাঁকে সম্মান দিলে রাষ্ট্রের কী ক্ষতি হতো?”
রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, এক নিঃস্ব হৃদয়ের প্রশ্ন— শিক্ষক মেহেরীন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পেতে পারতেন না?
শিক্ষক মেহেরীন যেভাবে নিজের জীবন দিয়ে অন্তত ২০টি শিশুকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছেন, তাতে তিনি জাতীয় বীরের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য ছিলেন—এমনই দাবি করেছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি।
২৩ জুলাই, বুধবার দুপুরে ঢাকা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিকে সামনে রেখে ‘মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে রাষ্ট্রের দায় নিরূপণ ও জুলাইয়ের মধ্যে “জুলাই সনদ” ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই হৃদয়বিদারক বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, “মেহেরীন ম্যাম নিজের জীবনকে পুড়িয়ে ২০টি শিশুকে বাঁচিয়েছেন। তার শরীর ঝলসে গেছে। কিন্তু রাষ্ট্র তাকে সম্মান জানাতে পারে নাই! তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হলে কি এই রাষ্ট্রের এতটুকু ক্ষতি হতো?”
শরীফ ওসমান বলেন, “তার হাসব্যান্ড বুকের ওপর হাত রেখে বলেছেন— ‘তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না।’ এই লাইন শুনেই তো মানুষের চোখে পানি চলে আসে। সে বলেছে, ‘তুমি শুধু আমার দুই সন্তানকেই না, আরো বিশটা বাচ্চাকেও তো তোমার সন্তান মনে করেছিলে।’ এই আত্মত্যাগ ক’জন পারে?”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, “এই রাষ্ট্রের একজন উপদেষ্টারও সময় হয়নি তার জানাজায় যাওয়ার? এই রাষ্ট্র এত বড়, এত অফিস-কাচারি করে, কিন্তু এতটুকু বিবেক জাগ্রত হলো না যে, একজন মহীয়সী শিক্ষক নিজের জীবন দিয়ে ইতিহাস লিখে গেলেন। তাহলে আর কাকে সম্মান জানাবে এই রাষ্ট্র?”
শরীফ ওসমানের মতে, “এই ভুল শুধুমাত্র সরকারের নয়, এই ভুল আমাদের সবার গায়ে লেগে যায়। কারণ এই সরকার দাবি করে, তারা সবচেয়ে জনপ্রিয়, জনগণের সরকার। তাহলে জনগণের এই কান্না কেউ শুনলো না কেন?”
তিনি আরও বলেন, “যদি মেহেরীন ম্যামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো হতো, তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, মূল্যবোধ—সবকিছুর প্রতি এক ধরনের আশার বার্তা যেত। তা না করে রাষ্ট্র শুধু নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে।”
এই বক্তব্য আসে এমন একদিনে, যেদিন 'ইনকিলাব মঞ্চ' সচিবালয় ঘেরাওয়ের লক্ষ্যে ‘কফিন মার্চ’ ডেকেছিল। তারা দাবি করেছে, জুলাই মাসের মধ্যেই ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা করতে হবে এবং মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে রাষ্ট্রীয় দায় নির্ধারণ করতে হবে।
এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুধু শোক নয়, জনগণের ক্ষোভ, হতাশা ও রাষ্ট্রের প্রতি গভীর অনাস্থাও প্রকাশ পেয়েছে।