ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চাঞ্চল্যকর এক ঘটনায় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলামকে শারীরিক নির্যাতন, উলঙ্গ করে ভিডিও ধারণ এবং মানসিক নিপীড়নের অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ১৮ মে। অভিযোগ অনুসারে, ঐ দিন রাতে পলিটেকনিক ছাত্র রাকিবুল ইসলামকে তার নিজ কক্ষ থেকে তুলে নিয়ে যায় ছাত্রদলের একদল নেতাকর্মী। নির্জন একটি স্থানে নিয়ে গিয়ে তাকে উলঙ্গ করে নির্মমভাবে মারধর করা হয় এবং সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করা হয়।
থানায় মামলা, কিন্তু নেই গ্রেপ্তার
এই বর্বর ঘটনার পরপরই রাকিবুল এবং তার সহপাঠীরা তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ফলে আজ রবিবার (২৫ মে) শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে ‘লংমার্চ টু তেজগাঁও থানা’ কর্মসূচি পালন করেন।
সকাল ১১টায় ক্যাম্পাস থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা রওনা দেন এবং দুপুর ১২টায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার সামনে অবস্থান নেন। সেখানে তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং দাবি তোলেন— অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে, নাহলে কর্মসূচি আরও কঠোর হবে।
থানার সামনে আমরণ অনশনের ঘোষণা
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “মামলা করার পরও পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা বাধ্য হয়েই থানার সামনে অবস্থান নিয়েছি। যদি এখনো বিচার না হয়, তাহলে আমরা আমরণ অনশন চালিয়ে যাব।”
এই কর্মসূচিতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল পুলিশের সঙ্গে বৈঠকে বসে। তারা জানান, আলোচনার ফলাফল বিবেচনায় রেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাকিবুলের স্ট্যাটাসে নিন্দার ঝড়
ভুক্তভোগী রাকিবুল ইসলাম নিজেই তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাস দেন, যেখানে তিনি ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেখানে তিনি লিখেন:
আমি রাকিবুল ইসলাম, ঢাকা পলিটেকনিকের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের ছাত্র। ১৮ মে দুপুরে ছাত্রদলের কয়েকজন আমার মোবাইল চেক করে এবং হুমকি দেয়। রাত ৯টার দিকে ২৩-২৪ সেশনের ৮-১০ জন ছাত্র আমার রুমে ঢুকে আমাকে জোর করে নিয়ে যায়, উলঙ্গ করে মারধর করে এবং ভিডিও ধারণ করে।”
অভিযুক্তদের নাম
এই ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা হলেন:
-
সৈকত (ইলেকট্রনিক্স)
-
স্বাধীন (ইলেকট্রিক্যাল)
-
ফয়েজ (সিভিল)
-
নাফিউর রহমান (ইলেকট্রনিক্স)
-
অনিক (ইলেকট্রনিক্স)
-
সচিন (ইলেকট্রিক্যাল)
-
মুন্না (কম্পিউটার)
-
মেহেদী (মেকানিক্যাল)
-
নিজুম (মেকানিক্যাল)
শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, এসব অভিযুক্ত ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানিক প্রভাব ব্যবহার করে তারা এ ধরনের বর্বর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি
একাধিক শিক্ষার্থী সরাসরি বলেন, “এই ঘটনা যদি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাহলে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে কঠোর আন্দোলনে যাব। ক্যাম্পাস বন্ধ হলেও রাজপথ ছাড়ব না। আমাদের বন্ধুকে উলঙ্গ করে পেটানো হয়েছে— এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”