close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আহত যুবলীগ নেতা পেলেন জুলাই যোদ্ধা অনুদান..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সময় পালিয়ে আহত হয়েছিলেন যুবলীগ নেতা মিনারুল। সেই ঘটনায়ই এখন তিনি হলেন ‘আহত জুলাই যোদ্ধা’—পেলেন এক লাখ টাকার অনুদান! ক্ষোভে ফুঁসছে জনমত।..

খুলনায় চাঞ্চল্য: শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আহত যুবলীগ নেতাকে দেয়া হলো ‘জুলাই যোদ্ধা’ অনুদান!

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পালিয়ে গিয়ে আহত হওয়া এক যুবলীগ নেতাকে ‘আহত জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে এক লাখ টাকার সরকারি অনুদান দেয়া হয়েছে—এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে।

ঘটনাটি খুলনার, যেখানে মিনারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি গত ১৪ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ‘সি ক্যাটাগরির’ জুলাই যোদ্ধা হিসেবে এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন। অথচ, অভিযোগ রয়েছে—তিনি কোনো আন্দোলনের শিকার হয়ে নয়, বরং ছাত্রদের উপর হামলা চালাতে গিয়ে নিজেই পালাতে গিয়ে আহত হন!

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট খুলনার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের এক বিক্ষোভ কর্মসূচির সময় সংঘর্ষ বাধে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে, যুবলীগ নেতা মিনারুল ইসলাম পালাতে গিয়ে টিনের চাল থেকে লাফ দেন এবং পায়ে গুরুতর আঘাত পান। সেই সময়ের কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে তার আহত হওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।

কিন্তু বিস্ময়করভাবে, বছর না ঘুরতেই সেই ঘটনা এখন বদলে গেল ‘আন্দোলনের সময় আহত’ হওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে। আর তাতেই তিনি পেয়ে গেলেন জুলাই যোদ্ধার সরকারি স্বীকৃতি ও অনুদান!

খুলনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সি ক্যাটাগরির আহত জুলাই যোদ্ধা হিসেবে খুলনা জেলার মোট ৬৩ জনের নাম চূড়ান্ত করা হয়। এদের মধ্যে ৫০ জন এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেছেন। মিনারুল ইসলাম সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন এবং ১৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে চেক গ্রহণ করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, “যে কেউ আবেদন করতে পারে। আবেদনগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। মিনারুল সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন, আমাদের কাছে তার আবেদনের কোনো তথ্য নেই।”

তবে এ নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কেননা মিনারুলের নামে অনুদান প্রাপ্তির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।

তেরখাদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এফ এম মফিজুর রহমান বলেন, “মিনারুল আমাদের মধুপুর ইউনিয়নের যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০২৩ সালের জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। ৪ আগস্টের আন্দোলনের সময় সে খুলনায় গিয়েছিল সমাবেশে অংশ নিতে। পরে পালাতে গিয়ে আহত হয়।”

তখনকার ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন খুলনা জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল। তিনি বলেন, “মিনারুল আমাদের সঙ্গেই ছিল। যখন ছাত্ররা ধাওয়া দেয়, সে কার্যালয় থেকে লাফ দিয়ে পড়ে এবং আহত হয়। আমরা তাকে খুলনা মেডিকেলে ভর্তি করেছিলাম।”

এই বিষয়ে মিনারুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রথমে তিনি জানান, “জরুরি মিটিংয়ে আছি, ১০ মিনিট পরে ফোন করবো।” কিন্তু এরপর আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এখন প্রশ্ন উঠছে, কীভাবে একজন ব্যক্তি, যিনি কোনো আন্দোলনের নেতৃত্ব দেননি বা কোনো নির্যাতনের শিকার হননি, বরং পালাতে গিয়ে নিজেই আহত হয়েছেন—তিনি কিভাবে ‘আহত জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত হলেন? এটি কি অনুদান বণ্টনে অনিয়মের স্পষ্ট উদাহরণ নয়?

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে জনমনে প্রশ্ন, আদৌ কি ব্যবস্থা হবে? নাকি অনিয়মের এই স্রোতে আরও অনেক নাম এমনভাবেই ঢুকে যাবে সরকারি অনুদানের তালিকায়?

জনগণ এখন চাইছে, শুধুমাত্র কাগজপত্রের যাচাই নয়, বাস্তব ঘটনা এবং ভূমিকা বিবেচনা করে যেন এমন অনুদান বিতরণ করা হয়। নইলে, সরকারের ভাবমূর্তিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে সাধারণ মানুষের কাছে।

Không có bình luận nào được tìm thấy