বিমান বিধ্বস্তে প্রাণহানি ও দায়িত্বহীন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বগুড়ায় ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগসহ দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।
বগুড়া, ২২ জুলাই:
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি. আর. আবরারের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে বগুড়ায় মুখরিত হয়েছে ছাত্রসমাজ। সোমবার দুপুরে শহরের সাতমাথায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ‘ক্রাস অ্যান্ড কনফেশন’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা সরকার এখনও প্রকাশ করেনি। অথচ দুর্ঘটনার পর রাত তিনটায় হঠাৎ করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষার স্থগিতাদেশ জারি করে, যা শিক্ষার্থীদের মতে একেবারেই দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘‘রাতের আঁধারে পরীক্ষার স্থগিতাদেশ জারি করে সরকার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কেউ জানে না ঠিক কতজন শিক্ষার্থী মারা গেছে বা আহত হয়েছে। এই অজানা অবস্থার মধ্যেই আমাদের পরীক্ষা দিতে বলা হচ্ছে। এটা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?’’
তারা আরও অভিযোগ করেন, শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব পরিস্থিতি সামাল দিতে চরম ব্যর্থ হয়েছেন। তাই অবিলম্বে শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ প্রয়োজন বলে দাবি জানানো হয়।
ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে:
-
প্রতিটি নিহত শিক্ষার্থীর নামসহ বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ
-
আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা
-
অনুপযুক্ত এয়ারক্রাফট দিয়ে প্রশিক্ষণ বন্ধ
-
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে অবিলম্বে সংস্কার
-
গভীর রাতে পরীক্ষার ঘোষণা স্থগিতের মতো অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ
-
শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ ও শিক্ষা ব্যবস্থায় পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করা
শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দেন, আগামী পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে দাবি না মানা হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে এবং সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন। তারা বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে সরকার এই ভয়ংকর খেলা বন্ধ করুক। শিক্ষা ব্যবস্থা খেলনা নয়।’’
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, “পদত্যাগ চাই”, “দুর্নীতিবাজ শিক্ষা উপদেষ্টার বিচার চাই”, “নিরাপদ শিক্ষা ব্যবস্থা চাই” ইত্যাদি। বিক্ষোভ চলাকালীন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে থাকলেও কোনো ধরনের সহিংসতা ঘটেনি।
স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং উর্ধ্বতন পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো সরকারিভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে ফিরে গেলেও তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে গেছেন, সময়মতো দাবি না মানলে পরবর্তী ধাপে ‘আন্দোলনের আগুন’ ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে।