নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক ফতুল্লা স্টেডিয়ামের করুণ অবস্থা দেখে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, মাঠকে আধুনিক করে খেলোয়াড়দের জন্য সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করবেন।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম—একসময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের গৌরবের প্রতীক ছিল। অসংখ্য আন্তর্জাতিক ম্যাচে এই মাঠে গ্যালারি ভরেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের উল্লাসে। অথচ আজ সেটি দাঁড়িয়ে আছে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার এক জীবন্ত সাক্ষী হয়ে। এ দৃশ্য দেখে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
রবিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে কোয়াব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “ক্রিকেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড আইডিয়া” শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিসিবি সভাপতি নিজের মনের গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ‘শহীদ রিয়া গোপ’ স্টেডিয়াম বা ফতুল্লা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ঘুরে দেখেছেন। সেখানকার ভয়াবহ চিত্র তার হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে।
বিসিবি সভাপতি বলেন, “এখানে আসার আগে আমি ফতুল্লা স্টেডিয়াম দেখে এলাম। আমার কান্না পাচ্ছিল, কী করুণ অবস্থা। মনে পড়ে যায়, এখানে আমাদের শাহরিয়ার নাফিজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিল। কিন্তু আজ সেই মাঠের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, খেলোয়াড়দের খেলার মতো পরিবেশই নেই। ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ফ্যাসিলিটি, আর সেই ফ্যাসিলিটির বর্তমান অবস্থা হতাশাজনক।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বিশ্বাস, এই স্টেডিয়ামে এখনও অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিলে ফতুল্লা আবারো আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যুতে রূপ নিতে পারে।”
নারায়ণগঞ্জে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকেও আলোকপাত করেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, “এখানকার ছেলে জিসান সম্প্রতি টপ-২০ তে অর্ধশতক করেছে। অথচ তার প্র্যাকটিসের সুযোগ আর বাস্তবে তার পারফরম্যান্সের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। তবুও এখানকার খেলোয়াড়রা নিজেদের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে উঠে আসছে, যা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক।”
স্থানীয় ক্রিকেট অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিসিবি সভাপতি ঘোষণা করেন, ফতুল্লা স্টেডিয়ামকে তিনি আবারও প্রাণ ফিরিয়ে দিতে চান। “এখানে বর্তমানে মাত্র ৩টি উইকেট আছে। আমরা কমপক্ষে ২০টি উইকেট তৈরি করব। মাঠকে ১২ মাস খেলার উপযোগী করে তুলব। খেলোয়াড়দের জন্য আধুনিক ফ্যাসিলিটি বাড়ানো হবে। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ে লেভেল-৩ কোচ নিয়োগ দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জকে এতটাই স্বাবলম্বী করা, যাতে এখানকার খেলোয়াড়দের আর ঢাকায় গিয়ে সুযোগ খুঁজতে না হয়।”
স্থানীয় ক্রিকেটার, কোচ ও ক্রীড়া সংগঠকেরা বিসিবি সভাপতির এই প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের আশা, বোর্ডের পক্ষ থেকে নেওয়া এ উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়িত হলে নারায়ণগঞ্জ শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যু হিসেবে আবার প্রতিষ্ঠিত হবে।
ফতুল্লা স্টেডিয়ামের করুণ চিত্র ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে কষ্টের জন্ম দিলেও বিসিবি সভাপতির উদ্যোগ নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। সবার প্রত্যাশা, শিগগিরই শহীদ রিয়া গোপ স্টেডিয়াম আবারো বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে গৌরব ফিরিয়ে আনবে।