জানা যায়, বিশালদেহী প্রতিটি হাতির জন্য গড়ে ২৫০ কেজি খাবারের প্রয়োজন হয়। শেরপুরের গারো পাহাড়ে বিচরণ করা শতাধিক হাতির বিশাল পরিমাণ খাবারের জোগান দিতে পারেনি জেলার প্রায় ২০ হাজার একরের বনভূমি। অপরপক্ষে, ৯০ এর দশকের পর থেকে তিলে তিলে দখল হতে থাকে বনভূমি। পাহাড়ি এলাকায় বিচরণ বাড়তে থাকে মানুষের। ফলে হাতির আবাসস্থল ক্রমশই ছোট হতে শুরু করে।এ দ্বন্দ্বে গত তিন দশকে হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে শিশু-বৃদ্ধসহ অনেক মানুষের। অন্যদিকে, মানুষের তৈরি ফাঁদে পড়ে কিংবা নানা কারণে মৃত্যু হয়েছে বন্য হাতিরও। স্থানীয়রা জানায়, মানুষ পাহাড় দখল করায় বন্যপ্রাণীর খাবার কমে যায়। তাই বনের পাশে ফসলের ক্ষেত থাকায় ক্ষুধার্ত অসহায় প্রাণীগুলো খাবারের জন্য হানা দেয় লোকালয়ে। যে এলাকাগুলোতে বন্যপ্রাণীর বিচরণ ছিল সেখানে মানুষ তৈরি করেছে ফসলের মাঠ। খাবারের সন্ধানে এখানে ওই প্রাণীগুলো হানা দিলে শুরু হয় হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্ব।এই দ্বন্দ্বে ১৯৯০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত হাতির আক্রমণে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে, নানাভাবে হাতির মৃত্যু হয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক। এই মৃত্যুর মিছিলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নাম যুক্ত হয়ে দীর্ঘ হচ্ছে সেই তালিকা।
close
ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!
হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ফসলের মাঠে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ফাঁদ তৈরি করে হাতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। হাতি মৃত্যুর ঘটনায় ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর শেরপুরের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো হাতি হত্যার অভিযোগে মামলা হলে চারজন কারাগারে যান। পরে বিদ্যুৎ সংযোগের নামে ফাঁদ দেয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন ও স্থানীয় বন বিভাগ।
প্রাণীর জায়গায় মানুষের বাসস্থান হওয়ায় সংকটে পড়েছে প্রাণিকুল। তাই দ্রুত হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে অভয়ারণ্য, কাঁটাযুক্ত গাছ, এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সার্বক্ষণিক সরবরাহ, বনের নিকটবর্তী বাসিন্দাদের হাতি তাড়াতে মশালের জন্য বিনা পয়সায় কেরোসিন সরবরাহের জন্য জোর দাবি জানান পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।
শেরপুরের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলম সময় সংবাদকে জানান, হাতি আর মানুষের দ্বন্দ্বের জন্য মূলত মানুষই দায়ী। কারণ হাতি কিন্তু মানুষের আবাসস্থলে যায়নি। বরং মানুষই বন কেটে উজার করে সেখানে বসতি গেড়েছে। বন প্রাণীদের আবাসভূমি, সেখানে মানুষ আবাস গড়লে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে দ্বন্দ্বতো হবেই।
তিনি আরও বলেন, বনভূমির জবরদখল বন্ধ করে সেখানে হাতির পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করা গেলেই একমাত্র হাতি আর মানুষের এই দ্বন্দ্ব নিরসন করা সম্ভব। হাতি ও মানুষের চলমান যুদ্ধ নিরসনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য মতে, গারো পাহাড়ের বাংলাদেশের ভিতর (ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর ও শেরপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে) প্রায় ৩ শতাধিক হাতি রয়েছে। হাতিকে রক্ষা করতে না পারলে একটা সময় এই ধীর প্রজননের প্রাণীটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
コメントがありません