শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ জমা দিলেন সালাহউদ্দিন আহমেদ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২০১৫ সালে ‘গুম’ হওয়ার অভিযোগে এবার সরাসরি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হলেন বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দায়ের করলেন চাঞ্চল্যকর অভিযো..

শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ দাখিল করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। মঙ্গলবার (৩ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগ দাখিলের মাধ্যমে এক চরম রাজনৈতিক ও মানবাধিকার ইস্যুকে নতুন করে সামনে আনলেন তিনি।

এর আগে, ২০২3 সালের ১৫ অক্টোবর তিনি গঠিত গুমসংক্রান্ত কমিশনেও নিজে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করেন। তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—এই প্রথমবার তিনি সরাসরি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিলেন।

ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, "বাংলাদেশে গুম ও খুনের ঘটনা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই অমানবিক অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভেঙে দিতে হবে।"

তিনি অভিযোগ করেন, এ পর্যন্ত যতজন নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের প্রকৃত বিচার হয়নি। যারা গুমের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাদের অধিকাংশই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। যাদের কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ায় এই অপরাধের সংস্কৃতি আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হাসানসহ গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এইসব ঘটনার পেছনে যারা ছিল, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সরকারকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না করে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে।”

নিজের নিখোঁজ হওয়ার স্মৃতি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, "২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে উত্তরার একটি বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সশস্ত্র কিছু ব্যক্তি আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর টানা ৬১ দিন কোথায় ছিলাম, কী ঘটেছিল—সবই গুম কমিশন ও এখন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছি। এমনকি আমি যেই রুমে বন্দি ছিলাম, সেই রুমের গঠন, দেয়ালের রং, আলো—সবকিছু বিস্তারিতভাবে বলেছি।"

তিনি আরও বলেন, "এই ৬১ দিন আমি কোথাও ছিলাম না, আমি রাষ্ট্রের জিম্মায় ছিলাম। অথচ হঠাৎ করেই আমাকে ভারতের মেঘালয়ে রেখে দিয়ে সেখানকার পুলিশের মাধ্যমে প্রচার চালানো হয় যে, আমি অবৈধভাবে প্রবেশ করেছি। এটা ছিল একটা সাজানো নাটক।"

২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলং শহরে সালাহউদ্দিনকে খুঁজে পায় স্থানীয় পুলিশ। সেখানকার ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট’-এর আওতায় মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে সেই মামলায় তিনি খালাস পান ২০১৮ সালে। ভারত সরকার আপিল করায় তাকে এখনো সেখানেই থাকতে হচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, তাঁর নিখোঁজ হওয়া ও পরবর্তী ঘটনাবলির পেছনে ছিল এক গভীর পরিকল্পনা। তিনি এ ঘটনার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং বলেছেন, “বাংলাদেশে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে হলে এই গুম-খুনের রাজনীতি বন্ধ করতেই হবে।”

তিনি আরও বলেন, “গুম শুধু ব্যক্তিগত কোনো ঘটনা নয়—এটি একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধ। আর এই অপরাধে যারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবার বিচার হওয়া জরুরি। আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে ন্যায়বিচার চাই। শুধু আমার নয়, সকল গুমের শিকার পরিবার যেন বিচার পায়, সেই দাবি নিয়েই এসেছি।”

এই অভিযোগ জমা দেওয়ার ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গুম-খুনের ঘটনা আন্তর্জাতিক পরিসরে নেওয়ার এই প্রয়াস বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং শাসনব্যবস্থার ওপর নতুন করে আলো ফেলবে।

Tidak ada komentar yang ditemukan