close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

শাস্তির হুমকির মধ্যে ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢল..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শাস্তির হুমকিকে অগ্রাহ্য করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে রাজপথে নামলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগারগাঁওয়ে জড়ো হয়ে ঘোষণা দিলেন, এবার আর পেছনে ফেরার পথ নেই।..

‘অবস্থান না নিলে শাস্তি’—প্রশাসনের এমন হুমকি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু তা উপেক্ষা করেই শনিবার (২৮ জুন) সকাল থেকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই, আন্দোলন পরিণত হয় এক বিশাল সমাবেশে।

এটা ছিল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পূর্বঘোষিত ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচির অংশ। আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট—তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের হাজারো কর্মকর্তা ঢাকায় সমবেত হন। উদ্দেশ্য একটাই—সরকার ঘোষিত এনবিআর বিলুপ্তির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমানকে অপসারণের দাবি।

গত ১২ এপ্রিল জারি হওয়া এক অধ্যাদেশে সরকার ঘোষণা দেয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিলুপ্ত করে দুটি নতুন বিভাগ—‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’—গঠিত হবে। শুরু থেকেই এ সিদ্ধান্তে তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন কর্মকর্তারা।

এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের বিভাজন রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। তারা মনে করছেন, এটি একটি পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ যার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের ভারসাম্য নষ্ট করা হবে।

প্রথম দফায় আন্দোলন শুরু হলেও পরে ১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয় ওই অধ্যাদেশ অকার্যকর ঘোষণা করলে কর্মীরা কাজে ফেরেন। কিন্তু আন্দোলন থেমে যায়নি। বরং ২৯ মে’র মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। সরকার সাড়া না দিলে তাঁকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়।

পরবর্তীতে ২২ জুন পাঁচ কর্মকর্তাকে বদলি করার সিদ্ধান্তে ফের ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন আন্দোলনকারীরা। পরিষদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়—প্রশাসন বুঝিয়ে দিচ্ছে, আন্দোলন থামাতে দমন-পীড়নের পথেই হাঁটবে তারা।

শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ শুরু হচ্ছে শনিবার থেকেই। অর্থাৎ, আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট অফিসের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবাকে এই কর্মসূচির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।

এই ঘোষণার পরপরই এনবিআরের পক্ষ থেকে পাল্টা বার্তা আসে—কোনো কর্মচারী অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে, অফিস ত্যাগ করলে বা দেরিতে উপস্থিত হলে—তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু কর্মকর্তাদের সাফ জবাব, শাস্তির ভয় দেখিয়ে এই আন্দোলন ঠেকানো যাবে না।

শনিবারের কর্মসূচিতে রাজপথে উঠে আসে নতুন স্লোগান:
“চেয়ারম্যান গেলে সমাধান হবে, নয়তো লাগবে আগুন”।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ নই। আমরা এই দেশের রাজস্ব সংগ্রাহক। আমাদের সঙ্গে অন্যায় হলে তার প্রতিবাদ করাই দায়িত্ব।

এদিকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া একজন অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এই আন্দোলন চাকরির জন্য নয়, এটি নীতির প্রশ্ন। এনবিআর ভেঙে দিলে ভেঙে পড়বে দেশের রাজস্ব কাঠামো।

সরকার ও এনবিআর প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের ভাষ্য—আলোচনা চলার সময়ই যেভাবে বদলি ও শাস্তির হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাতে সংলাপে আস্থা নেই।

এক নেতা বলেন, যেখানে সরকার আমাদের দমন করতে চায়, সেখানে সংলাপ কেবল সময়ক্ষেপণের ফাঁদ।

এই আন্দোলন যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে দেশের রাজস্ব আদায় কার্যক্রমে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে বাজেট বাস্তবায়ন, আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম এমনকি সরকারি বেতন-ভাতা প্রদানের ওপরেও।

সরকারের এখন বড় চ্যালেঞ্জ—এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, এবার তাঁরা আর পিছু হটবেন না।

Комментариев нет