শাপলা প্রতীক দিতে হবে নয়তো ধান বাদ দিতে হবে: নাসীরুদ্দীন

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
NCP leader Nasiruddin Patwari insists the party will not accept registration without the “Shapla” symbol — if the Election Commission assigns alternative symbols like “Dhan” or “Sonali Ash,” the NCP w..

এনসিপির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, শাপলা প্রতীক ছাড়া দলটি নিবন্ধন গ্রহণ করবে না — নির্বাচন কমিশন যদি শাপলা না দিয়ে ধান/সোনালী আঁশ দেয়, তাহলে দল প্রতীক বদলে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে এবং গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের মাধ্যমে শাপলা ফিরে আনার চেষ্টা চালাবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, তার দল শাপলা প্রতীক ছাড়া নিবন্ধন গৃহীত করবে না। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আগারগাঁওয়ে রাজধানীর নির্বাচন ভবনে দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান তিনি, এনসিপি যদি শাপলা প্রতীক না পায় তাহলে বিকল্প প্রতীকের সঙ্গে দলটি নিবন্ধনে আগাবে না—এবং প্রয়োজন হলে গণতান্ত্রিক পন্থায় প্রতীক আদায়ের লড়াই চালিয়ে যাবে।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছি—শাপলা প্রতীক ছাড়া এনসিপির নিবন্ধন আমরা মেনে নেব না। আমাদের পক্ষ থেকে শাপলা প্রতীক পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বা রাজনৈতিক বাধা দেখছি না, এবং এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনও যদি কোনো যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে না পারে, তাহলে সেই ব্যাখ্যার অভাবের জন্যই দায় কিছুটা নির্বাচন কমিশনেরই বলে গণ্য হবে। তিনি আরো বলেন, “শাপলা ছাড়া এনসিপি নিবন্ধন নেবে না। শাপলা ছাড়া নিবন্ধন মানা হবে না।”

বৈঠকে আলোচিত বিষয় সম্পর্কে আরও বলেন নাসীরুদ্দীন, নির্বাচন কমিশন কেন শাপলা প্রতীক দিচ্ছে না সে বিষয়ে তাদের কাছে স্পষ্ট কোনও আইনি বা রাজনৈতিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তাই নির্বাচন কমিশনের সামনে দুইটি পথ রয়েছে—এক, শাপলা প্রতীক প্রদান করে এনসিপির নিবন্ধন সম্পন্ন করা; অথবা দুই, যদি শাপলা না দেওয়া হয় তাহলে ধান বা সোনালী আঁশ জাতীয় অন্য প্রতীকটি বাদ দিতে হবে এবং এনসিপি নিবন্ধনে সম্মত হবে না। এসব পরিস্থিতিতে যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে তার দায় যদিও পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের নয়, তবু নির্দিষ্ট অংশের দায় কমিশনের ওপর বর্তাবে—এমন মত প্রকাশ করলেন তিনি।

নাসীরুদ্দীন বলেন, অধিকার ও আইনী মর্যাদার প্রশ্নে আপস হবে না। তিনি আরও মন্তব্য করেন যে, “শাপলা প্রতীক পেতে আমরা গণতান্ত্রিক লড়াই চালিয়ে যাব। অধিকার ছাড়তে রাজি নই—জল অনেক দূর গড়ানোর আশঙ্কা করছি। শাপলা ছাড়া নিবন্ধনে যাব না, নিবন্ধন ছাড়া কীভাবে একটি দল নির্বাচনে যাবে?”—এভাবে প্রশ্ন রেখে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

রবিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচন কমিশন ও এনসিপির প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতীকের বিতর্ক নিয়েই ছিল মূল আলোচনা। এনসিপি দাবি করে আসছে যে, শাপলা প্রতীক তাদের ঐতিহ্যগত ও জনবহুল পরিচয়ের প্রতীক—যা দলের স্বীকৃতি ও গণসংযোগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এমনটি না দেওয়ার ফলে ভোটার ও সমর্থকশ্রেণীর মধ্যে বিভ্রাট সৃষ্টি হবে বলেও দলের নেতারা আশঙ্কা করছেন। পক্ষান্তরে নির্বাচন কমিশন এখনও তাদের নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে প্রতীক বরাদ্দ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে—তবে বৈঠকে কমিশন থেকে কেন শাপলা দেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি বলে এনসিপির দাবি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতীক বিতর্ক কোনো রাজনৈতিক দলকে হালকা করে নেওয়া যায় না—বিশেষ করে গ্রামীণ ও শহর দুই অঞ্চলে সমর্থকের কাছে দীর্ঘদিন ধরে প্রতীকই দলটির সশস্ত্র পরিচয়। প্রতীকের বদলে অন্য কোনো চেনা প্রতীক দিলে তা ভোটে বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং নির্বাচনী ফলাফলেও প্রভাব ফেলে। এনসিপির ঘোষণার ফলে যদি নিবন্ধন না মিলে থাকে, তাহলে দলের অংশগ্রহণকে নিয়ে নতুন অসমতা তৈরি হতে পারে—যা সারা নির্বাচনী ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও পক্ষপাতহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।

বৈঠকের পর সংবাদে নাসীরুদ্দীনের ওই দাবির প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছ। এনসিপি সমর্থকরা বার্তায় বলে থাকেন, প্রতীক ছাড়া দল সনাক্ত করা কঠিন—এবং শাপলাকে কেন্দ্র করে বহু কর্মী-সমর্থকের আবেগ জড়িত। অন্যদিকে, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা এ বিষয়ে বলছেন যে, প্রতীক প্রদানে নিয়মানুযায়ী যে কোনো আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত—এবং যদি কমিশন কোনো নির্দিষ্ট কারণ দেখায়, তখন সেটি আইনের আলোকে পর্যবেক্ষণ করা দরকার। আইনি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত যদি বিতর্কের জন্ম দেয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট দল আইনি চ্যানেলে এই দাবি তোলার সুযোগও রাখে—কিন্তু একই সঙ্গে রাজনৈতিক আঞ্চলিক বাস্তবতাও বিবেচনায় রাখতে হবে।

নির্বাচন কমিশন কর্তৃপক্ষের তরফে এ বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কমিশনকে যোগাযোগ করলে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বার্থে এবং নিয়মানুযায়ী কাজ করছে বলে জানায়—তবে নির্দিষ্ট কেন শাপলা দেওয়া হচ্ছে না সেই যুক্তি বৈঠকের পরপরই প্রকাশ করা হয়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দ্রুত ও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা না দিলে পরিস্থিতি তিক্ততায় রূপ নেবে এবং এনসিপির সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে—বিশেষ করে যেখানে নিবন্ধন-সংক্রান্ত সময়সীমা ও নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা হিসেবে সামনে রয়েছে।

এনসিপির অঙ্গীকার স্পষ্ট—প্রতীক না পেলে নিবন্ধন গ্রহণ করবে না, এবং শাপলা আদায়ের জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও আইনি পথে যাবেন। নাসীরুদ্দীন তাঁর বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন যে, দল থেকে আপস আশা করা ঠিক হবে না এবং প্রয়োজন হলে তারা মাঠে গিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে। তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, নানা রাজনৈতিক ইস্যুতে দল যদি নিয়মিতভাবে স্বীকৃতি না পায়, তাহলে তা ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিভ্রাট সৃষ্টি করতে পারে—এই আশঙ্কা থেকেই তিনি শক্ত অবস্থান প্রকাশ করেছেন।

এবার প্রশ্ন থেকে যায়—নির্বাচন কমিশন কীভাবে এই ইস্যু মোকাবিলা করবে? কমিশন যদি শাপলা না দিয়ে অন্য প্রতীক বরাদ্দ করে, তাহলে কি এনসিপি আদালত বা গণআন্দোলনের পথ বেছে নেবে? করণীয় যা-ই হোক, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেবার ওপর নির্ভর করবে শেষ পর্যায়ে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনাটি। এনসিপি পক্ষের হুঁশিয়ারি এবং নির্বাচন কমিশনের নিরবতা—এই দ্বৈরথ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়ানোর সম্ভাবনা রাখে।

নাসীরুদ্দীনের ঘোষণার প্রেক্ষিতে এনসিপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এখন লক্ষ্য রাখার মতো উত্তেজনা ফুটে উঠেছে; তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মাঠ-অভিযানে দলীয় স্বীকৃতি ও প্রতীক রক্ষার আহ্বান জানাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে যদি নির্বাচন কমিশন কোনো ন্যায্য ও স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান না করে, তাহলে সংঘর্ষ ছাড়াই এ ইস্যু মীমাংসা করা কঠিন হবে—এবং তা দেশের রাজনৈতিক আবহওয়ায় নতুনভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

নির্বাচনী ক্যালেন্ডার ও আইনি সময়সীমা বিবেচনায় নিয়ে কীভাবে এনসিপি ও নির্বাচন কমিশন এ ইস্যু সমাধান করবেন—সেই দিকে এখন রাজনৈতিক মহলের আগ্রহ নিবদ্ধ। এনসিপি পক্ষ বলছে তারা আপস করবে না; আর নির্বাচন কমিশন কর্তারা যদি দ্রুত ও সুচারুভাবে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন, তাহলে সংকট মিটে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দলের নেতৃত্ব বলেছে—শাপলা না পেলে তারা নিবন্ধনে যাবেন না এবং প্রয়োজনে গণতান্ত্রিক লড়াই অব্যাহত রাখবে।

کوئی تبصرہ نہیں ملا


News Card Generator