মো: তানজিম হোসাইন, শিক্ষক ও সাংবাদিক
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে। অধিকাংশই নারী ও শিশু। ধ্বংস হয়েছে হাসপাতাল, মসজিদ, স্কুল, শরণার্থী ক্যাম্প—এমনকি জাতিসংঘ পরিচালিত আশ্রয় কেন্দ্রও রক্ষা পায়নি। কিন্তু তথাকথিত উন্নত বিশ্ব, বিশেষ করে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো তখন ছিল নীরব দর্শক।
আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা—তারা কেউই স্পষ্টভাবে ইসরাইলের বর্বরতাকে যুদ্ধাপরাধ বলেনি। বরং একেকজন অস্ত্র পাঠিয়েছে, কূটনৈতিকভাবে পাশে থেকেছে।
কিন্তু যখন ইরান ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পাল্টা আঘাত হানে, তখন সেই একই গোষ্ঠী সরব হয়ে ওঠে—
ইরানই নাকি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি!
প্রশ্ন হলো, কে আঘাত করেছে আগে?
যখন ইসরাইল থেকে ইরানের কনস্যুলেটে ড্রোন হামলায় ৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়, তখন কি ‘আন্তর্জাতিক শান্তি’ শব্দটা হারিয়ে গিয়েছিল?
আর এখন যখন ইরান সেই অন্যায়ের জবাব দিয়েছে, তখনই সব ‘সিভিলাইজড’ জাতিগুলোর বিবেক জেগে উঠেছে!
একদিকে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত—
অন্যদিকে ইসরাইল-ইরান উত্তেজনায় ইসরাইলি নিহত মাত্র ২৫ জন, ইরানি নিহত ৫০০’র বেশি।
তবুও ‘আক্রমণকারী’ হিসেবে ইরানের দিকেই আঙুল?
এই দ্বিচারিতা এখানেই শেষ নয়।
বিশ্বের হাতে শত শত পারমাণবিক বোমা—যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইসরাইল সবাই গর্ব করে তাতে।
কিন্তু যখন ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক গবেষণা করতে চায়, তখন সেটাই হয় ‘আন্তর্জাতিক হুমকি’!
তাহলে প্রশ্ন ওঠে—বোমা রাখা কি শুধু ‘বন্ধু রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার?’
এটাই কি আধুনিক সভ্যতা?
এটাই কি সেই মানবাধিকার, যেটার কথা বলে বিশ্বমঞ্চে বড় বড় বক্তৃতা হয়?
একটি রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা যদি তার অপরাধ হয়,
আর আরেক রাষ্ট্রের আগ্রাসন যদি তার ‘অধিকার’ হয়ে যায়—
তাহলে বুঝতে হবে, বিশ্ব এখন আর ন্যায়বিচার দ্বারা পরিচালিত হয় না,
বরং চলে পক্ষপাতদুষ্ট শক্তির কু-রাজনীতিতে।
এই পরিস্থিতে প্রশ্ন উঠতেই পারে—
রক্তের রঙ কি এক নয়?
নাকি মুসলিম রক্তের দাম এখনো পশ্চিমাদের চোখে সবচেয়ে সস্তা?